কাঠমাণ্ডু: মধুচন্দ্রিমায় যেতে রোমান্টিক স্থান খুঁজতে মোটামুটি গলদঘর্ম হতে হয় নববিবাহিত বেশিরভাগ দম্পতিকেই। দু’জনের পছন্দসই স্থান নির্বাচন করাটা অনেক ক্ষেত্রেই দুঃসাধ্য।
এক্ষেত্রে অনেকের পছন্দ তালিকার শীর্ষে রয়েছে হিমালয় কন্যা নেপাল। এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হচ্ছে পোখারা শহর। চোখ ধাঁধানো ক্যাসিনো এবং পবিত্র পশুপতিনাথ মন্দির সবার দৃষ্টি কাড়ে। প্রতি বছর এদেশে আসে হাজার হাজার ভারতীয়। তবে তাদের বেশিরভাগই জানে না তাদেরই এ প্রতিবেশি দেশে রয়েছে আরেকটি তাজমহল। অবশ্য এরকম অজানা আরও অনেক দর্শনীয় স্থান নেপালে রয়েছে যা অনেকেই জানে না। এ কারণেই ২০১১ সালকে নেপাল ঘটা করে পর্যটন বছর হিসেবে উদযাপন করছে। উদ্দেশ্য সেই সব অজানা অবহেলিত স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে পরিচিত করে তোলা।
এই তাজমহলটি তৈরি করা হয় উনিশ শতকে। একে নেপালের তাজমহল বলা হয় এবং একইভাবে এটিও একটি ভালবাসার নৈবেদ্য। একজন অভিজাত লোক তার স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে এটি নির্মাণ করেন। ওই ব্যক্তি বিজয়রাজ সিন্দিয়ার ঠাকুরদা। তাদের বাস ছিল প্রাচীন ভারতীয় রাজ্য গোয়ালিওরের রাজমাতায়।
স্থাপনাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার তিনশ ফুট উচ্চতার শহর নেপালের দার্জিলিংখ্যাত তানসেনে। স্থানীয়ভাবে একে রানীমহল নামে ডাকা হয়। ১৮৯৭ সালে খাজা শমসের জং বাহাদুর রানা এটি নির্মাণ করেন।
এ স্থাপনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অনবদ্য প্রেম, ভীতি এবং মর্মান্তিক নির্বাসনের কাহিনী। উচ্চাভিলাষী এ ব্যক্তি ছিলেন নেপাল সেনাবাহিনীর জেনারেল। তিনি ষড়যন্ত্র করে আপন চাচা রানাদিপ সিং বাহাদুরকে তার ভাইয়ের মাধ্যমে খুন করেন। তবে, ক্ষমতা লাভের উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন তার পূরণ হয়নি। আপন ভাই বীর পথের কাঁটা সরাতে রানাকে নেপালের পশ্চিমাঞ্চল পাপ্লাতে নির্বাসন দেন। পরে বীর নেপালের সিংহাসনে বসেন।
রানার সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ পদটিও কেড়ে নেওয়া হয়। পরে নির্বাসিত অবস্থায় বেনারসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এ অসম্মানজনক নির্বাসিত জীবনে রানার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন প্রিয় মহিষী তেজকুমারি। কালিগান্ধারি নদীর তীর এবং আশপাশের ছোট পাহাড়গুলির অপরূপ দৃশ্য তাদের অপমান এবং দুঃসহ নির্বাসনের জীবনে অনেকটা স্বস্তি দিয়েছিল।
লোকমুখে প্রচলিত গল্পে জানা যায়, রানী তেজকুমারি প্রায়ই তার অপঘাতে মৃত্যু ঘটবে এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকতেন। এ কারণে মানুষ যাতে তাকে চিরদিন মনে রাখে সে লক্ষ্যে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে স্বামীর কাছে বায়না ধরলেন। মৃত্যুশয্যায় স্বামী রানাকে অনুরোধ করেন, তার জন্য যেন একটি দ্বিতল প্রাসাদোপম সৌধ নির্মাণ করা হয়। সৌধটি হবে তার সমাধির চারদিক ঘিরে। আর পাদদেশ জুড়ে থাকবে ফুলের বাগান। পরে রানা তার স্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা এটি একজন বিতাড়িত বিচ্যুত ব্যক্তির সম্পত্তি বলে উপেক্ষা করে গেছে।
১৯৯৮ সালে এটি নেপালের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাদের তত্ত্বাবধানে নেওয়ার পর এর ঘষামাজা করা হয়। এরপর দেশটির অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির দরুণ এটি আর তেমন গুরুত্ব পায়নি। এর সৌন্দর্য্য সেভাবে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।
মূল প্রাসাদের রয়েছে ৬৪টি কক্ষ। ২০০৬ সালে মাওবাদী গেরিলাদের হামলায় অবশ্য অনেক কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তানসেন বাংলাদেশে তৈরি ঢাকাই শাড়ির স্মৃতিচিহ্নবাহী হস্তচালিত তাঁতে বোনা ঢাকাই কাপড়ের বাজারের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন মনোহারি দৃশ্যও দেখা যায়। এর মধ্যে ডুলাহাজারি, অন্নপূর্ণা এবং মাক্কাপুকরি অন্যতম।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১১