প্যারিস: লিবিয়ায় চলমান অস্থিতিশীলতার ব্যাপারে জাতিসংঘ বা আফ্রিকান ইউনিয়নের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন দেশটির নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। একইসঙ্গে তদন্তকারীদের লিবিয়ায় প্রবেশ উন্মুক্ত বলেও রোববার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে গাদ্দাফি বলেন।
লিবিয়ায় তার শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সহিংসতার পর এবারই প্রথম এ ধরনের দাবি জানালেন চার দশক ধরে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা এ স্বৈরশাসক। একইসঙ্গে এ বিক্ষোভ ইউরোপে বিপর্যয় ডেকে আনবে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
ফ্রান্সের সংবাদপত্র লা জার্নাল দু দিমঁশে-র কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গাদ্দাফি বলেন, ‘প্রথমেই আমি জাতিসংঘ বা আফ্রিকান ইউনিয়নের তদন্ত দলকে লিবিয়ায় দেখতে চাই। আমরা এ দলকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেবো। ’
একইসঙ্গে এক্ষেত্রে তদন্ত কাজে সহযোগিতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি ফ্রান্সকে অগ্রাধিকার দেবেন বলেও জানান।
এদিকে, লিবিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরপরই গাদ্দাফির ছেলে এবং দেশটির সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী সাইফ আল-ইসলাম এ অস্থিরতার স্বাধীন ও অভ্যন্তরীণ তদন্তের দাবি জানান।
এছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনারের প্রধান নাভি পিল্লাইও স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তসহ লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধের আহ্বান জানান।
গাদ্দাফির ৪১ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ ইউরোপে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে উল্লেখ করে গাদ্দাফি বলেন, ‘লিবিয়া থেকে হাজার হাজার মানুষ ইউরোপে পাড়ি দেবে এবং তাদের কেউ ঠেকাতে পারবে না। ’
একইসঙ্গে তার দেশ আল-কায়েদার সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের আক্রমণের শিকার বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছেন গাদ্দাফি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আপনারা ইসলামি জিহাদের সম্মুখীন হয়েছেন। ওসামা বিন লাদেন স্বয়ং উত্তর আফ্রিকায় এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। খুব শিগগিরই আপনার দরজায় আপনি লাদেনকে দেখতে পাবেন। ’
তবে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমসের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তার নির্বাসনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করেন গাদ্দাফি। এ বিষয়ে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘কেউ কি তার নিজ দেশ ছেড়ে চলে যায়? তাহলে আমি কেন লিবিয়া ছাড়বো?’
একইসঙ্গে তার বাহিনীর লিবিয়ার বেসামরিক জনগণের ওপর হামলার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন গাদ্দাফি এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দ করা বিষয়ে ুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশী ব্যাংক থেকে তারা আমার নামে থাকা এক দিনারও নিয়ে আসতে পারবে না বলে আমি ক্যামেরন ও অন্যদের চ্যালেঞ্জ করছি। ’
‘আমি তার মতো অর্থসম্পদের প্রতি আমার আগ্রহ নেই। লিবিয়ার ভেতরে বা বাইরে তারা আমার নামে কোনো অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাবে না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের রাষ্ট্রনেতারা বলছেন, আমার এখন ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমি তাদের বলি, আপনাদের মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন এবং এরপর অবসরে যাবেন। কিন্তু তারপরও আমি এ বিপ্লবের নেতা থেকে যাবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১১