ঢাকা: জীবনের সার্থকতা কীসে? এ প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে ‘অর্থ’, কারও কাছে ‘ক্ষমতা’, আর কারও কাছে ‘সম্মান-প্রতিপত্তি’। কিন্তু কিছু মানুষের কাছে কেবলই ‘সেবা, নিখাদ মানবসেবা’।
‘মানবপ্রেম’ শেষোক্তদের এতো বেশি মোহাবিষ্ট করে রাখে যে মৃত্যুর পরও তারা নিখাদ মানবসেবার সুযোগ তৈরি করে যান। এমনকি নিজে মারা গেলেও বাঁচার সুযোগ করে দিয়ে যান অন্য কোনো মানুষের। যেমনটি করলেন ইংল্যান্ডের লিডসের ১৯ বছর বয়সী তরুণী এমা উইটি। নিজে মারা গেলেও অঙ্গ দান করে বাঁচিয়ে গেলেন ছয় জনের প্রাণ, দৃষ্টিও দিয়ে গেলেন একজনকে।
খুব বেশি ফটোগ্রাফিপ্রিয় ছিলেন এমা। অন্য দশটা তরুণীর মতো প্রাণচাঞ্চল্যে আশপাশ মাতালেও সময় বের করে ক্যামেরা কাঁধে ঘুরে বেড়াতেন দেশের এ প্রান্ত-ও প্রান্ত। এই ফটোগ্রাফির মাধ্যমে এমা মানুষের জীবনকে অনেক কাছ থেকে দেখতে থাকেন, ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন মানুষের কষ্টগুলোর। সাধ্যানুযায়ী চালিয়ে যেতেন নিঃস্বার্থ উপকারব্রত।
এমার এমন প্রেমে মানুষ হাসলেও অকালেই একদিন প্রকৃতি তাকে থামিয়ে দিল।
সেদিন লিডসের বাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এমা। একা ছিলেন। দাদার বাড়ি বেড়াতে যাওয়া মা ক্যাথেরিনকে ফোনে জানিয়ে দেন, আজ তিনি বাড়িতেই থাকছেন। কিন্তু বাড়িতে বেশিক্ষণ থাকা হলো না এমার। গভীর রাতে মা ক্যাথেরিন ফোন পান গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে মেয়েকে। ছুটে হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, এমা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। কিন্তু এরকম কথাবার্তাও চলে মাত্র তিনদিন। তারপর চিরতরে শান্ত হয়ে যান প্রাণচঞ্চল এমা। চিকিৎসকরা জানান, এমার মাথায় হেমারেজ ছিল।
পরে এমার শেষ ইচ্ছে সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বন্ধু ওলি ডবসন জানান, এমা প্রায়ই তার অঙ্গদানের ইচ্ছে পোষণ করতেন।
শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী, এমার হৃদয় দেওয়া হয় ২০ বছর বয়সী অপর এক তরুণীকে। তার অগ্নাশয়, কিডনি, ফুসফুস, যকৃৎ দেওয়া হয় আরও পাঁচজনকে। আর মানবপ্রেমী এমার চোখ পান আরেক ব্যক্তি।
একজনের দৃষ্টি আর ছয়জনের প্রাণে যেন সহস্র বছর বাঁচার সুযোগ পেয়ে গেলেন এমা।
মা ক্যাথেরিন বলেন, ওর মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ও যে ছয় জনের মধ্যে বেঁচে আছে এটাই শান্তি। নিশ্চিতভাবেই ওর আত্মা শান্তিতে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৪