ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মিশর: বিপ্লবের পর গণতন্ত্রের পদধ্বনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১১
মিশর: বিপ্লবের পর গণতন্ত্রের পদধ্বনি

কায়রো: বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মিশরীয় জনগণ শনিবার সংশোধিত সংবিধানের ওপর ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ ভোট দিচ্ছেন।

প্রেসিডেন্ট মোবারকের ৩০ বছরের ক্ষমতার পতনের পর এই প্রথম মিশরের জনগণ এমন আগ্রহের সঙ্গে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন।



ভোট গ্রহণ শুরুর সময় সকাল ৮ টা থেকে মানুষ ভোট কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়াতে শুরু করে। যেটা প্রেসিডেন্ট মোবারকের শাসনামলে মিশরের জনগণ শুনতেও পায়নি কখনো।

প্রেসিডেন্ট মোবারককে উৎখাতের পাঁচ সপ্তাহ পরেই সাড়ে চার কোটি মিশরীয় জনগণ সাংবিধানিক পরিবর্তনের ব্যাপারে তাদের মতামত প্রয়োগ করছেন। এই সাংবিধানিক পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট এবং সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরব দুনিয়ার সবচেয়ে জনবহুল এই রাষ্ট্রটিকে একটি নতুন নেতৃত্ব উপহার দেওয়া।

বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল মাত্র ১০ দিনের মধ্যে হ্যাঁ বা না ভোটের জন্য প্রস্তাবিত এই সংবিধান উপস্থিত করেছে। রাজনৈতিক বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে মোবারকের উৎখাতের পর ক্ষমতা বুঝে নেওয়া সামরিক বাহিনী যতো দ্রুত সময়ে সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাচ্ছে।

তবে তড়িঘড়ি করে করা সংবিধানের এই সীমিত সংশোধনের বিপক্ষে মিশরের বেশিরভাগ মানুষ। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, না ভোটই পড়বে বেশি। মানুষ চায় সংবিধানের আমুল পরিবর্তন।

কায়রোর অভিজাত এলাকার কাজর-এল-দোবরা স্কুলের ভোট কেন্দ্রে ভোট শুরু হওয়ার প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই সারবেঁধে কয়েকশ মানুষকে ভোট দেওয়ার জন্য দাঁড়াতে দেখা যায়।

৩১ বছর বয়সী বিক্রয় ব্যবস্থাপক করিম জাদা এসেছেন ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে। তিনি জানান, জীবনে এই প্রথম তিনি ভোট দিতে এসেছেন।

আরব লিগের প্রেসিডেন্ট আমর মুসা ব্যাপক সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি নিজেও আগামী নির্বাচনে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

তিনি বলেন, “মিশরের বেশিরভাগ মানুষের এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। তারা এই প্রথমবারের মতো ভোটের ওপর আস্থা রাখছেন এবং বিশ্বাস করছেন তাদের ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়া হবে না। ”

আমর মুসা বলেন, “মিশরীয়রা হ্যাঁ অথবা না যেটার পক্ষেই রায় দিক না কেন সেটাই সঠিক। ” আমর মুসা নতুন নির্বাচনের পূর্বে মুবারক যুগের সংবিধানের সীমিত পরিবর্তনের বিপক্ষে।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে মানুষ আসছে (ভোট দিতে)। একইসঙ্গে নতুন মিশরের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ”

জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার (আইএইএ) সাবেক প্রধান আলবারাদি বলেন বেশির ভাগ ভোটারই সংবিধানের এই আংশিক সংশোধনের বিপক্ষে না ভোট দিতে পারেন। আগামী নির্বাচনে আলবারাদি নিজেও একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

তাদের কাছে সংশোধিত এই সংবিধান সাধারণভাবে বিতর্কিত নয়। তবে সমালোচকরা বলছেন তারা মুবারক যুগের সংবিধান সংশোধনের পক্ষে নয়। তারা মনে করছেন এই সংবিধান নতুন করে লেখা প্রয়োজন।

সংশোধিত সংবিধানের মূল বিষয় হচ্ছে একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট চার বছর করে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। কোনো বেসামরিক লোককে সামরিক আদালতে বিচারের জন্য পাঠাতে পারবেন না। জনগণের অনুমোদন বা সম্মতি ছাড়া জরুরি অবস্থা কোনোভাবেই ছয় মাসের বেশি থাকতে পারবে না।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে শর্তাবলী আরো শিথিল করা হয়েছে সংশোধিত সংবিধানে। ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে সব নির্বাচনে বিচারিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা আবার পুনস্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।