ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার হচ্ছেই; বুদ্ধদেব

রক্তিম দাশ, সিনিয়ার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১১

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার হচ্ছেই। কোনও মতেই তৃণমূল এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে না।



বুধবার কলকাতায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সিপিএম রাজ্য দপ্তরে এক প্রাক নির্বাচনী সংবাদ সম্মেলেন এ কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘দিল্লিতে কংগ্রেসের অবস্থা ভালো নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা জিনিসপত্রের দাম। এ যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ জানে না। কেন্দ্রের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রধান মন্ত্রীকে বলেছি রেশন ব্যবস্থা করে দিয়ে দাম বেঁধে দিন। দেশের ৮০ ভাগ মানুষ বেঁচে যাবে। এছাড়া উপায় নেই। দিল্লি না দাম বাঁধলে আমরা দাম কমাতে পারবো না। ’

এ সময় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির জোর সমলোচনা করেন বুদ্ধদেব।

তিনি বলেন, টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির জন্য রাজার আগেই জেলে যাওয়া উচিত ছিল। ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। এত টাকাও লাগতো না দেশে রেশন ব্যবস্থা চালু করতে। সবার জন্য রেশন চালু করুন।

দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বুদ্ধদেব বলেন, সারা দেশে কৃষির অবস্থা খারাপ। জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু উৎপাদন বাড়ছে না। ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া চিনি, পেঁয়াজ বিদেশে বিক্রি করছে। আবার ঘাটতি হলে বিদেশ থেকে এনে মুনাফা করছে।

তিনি এক্ষেত্রে কংগ্রেস সরকারকেই দোষ দেন।

বুদ্ধদেব বলেন, কংগ্রেস সরকারের নীতি বড়লোকের মাথায় তেল দেওয়া। দেশের ৬৩টি পরিবার জনসাধারণের সম্পদ লুঠ করছে। এখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে একটা বড়লোকের দেশ, আর একটা গরিবের ভারত। যেখানে কাজ নেই, খাদ্য নেই, বাসস্থান নেই।

ভারতের বড়লোকরা বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখছে এমন অভিযোগ করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা বলছি এই টাকা ফেরত আনো, এদের নাম জানাও। অথচ ওরা ফেরতও আনবে না। নামও বলবে না। ওদের পা কাঁপে। ‘

রেল বাজটের তীব্র সমলোচনা করে তিনি বলেন, রেল এখন ঘাটতিতে চলছে। এটা কী বাজেট? ১ টাকা আয় করলে ৯৮ পয়সা খরচ! ট্রেন নেই, স্টেশন নেই, দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাও বলছে রেল চলছে। ’

এদিন তিনি বামফ্রন্টের নির্বাচনী ইস্তাহারের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা কৃষিতে সমৃদ্ধ। আরও উৎপাদন বাড়াতে হবে। আয় বাড়াতে হবে, জীবন যাত্রা বদলাতে হবে। আমরা চাই জমির মালিকানা ৮৪ ভাগ ছোট কৃষকের হাতে থাকুক। এটার কী পরিবর্তন চাচ্ছেন বিরোধীরা?

শিল্প নিয়ে তিনি বলেন, অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্পের প্রতি আরও  জোর দেবে। শালবনির মতো আরও কারখানা চাই। কাজ তৈরি কর। আয় বাড়াও। গড়তে হবে কৃষিভিত্তিক শিল্প। সেইসঙ্গে আরও তথ্য প্রযুক্তি শিল্প গড়তে হবে।

রাজ্যের ৯৯ ভাগ শিশু এখন প্রাথমিক স্কুলে যায় উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ শিশুদের ধরে রাখতে হবে। এখন ৭০০ টা কলেজসহ রাজ্যে ১৮ টা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যত লেখাপড়া জানা ছেলে পাব তত লাভ। তফসিলি, আদিবাসী ও মুসলমান ঘরের ছেলেমেয়েদের আর বেশি করে এগিয়ে আনার জন্য আমরা উদ্যোগ নেব।

রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দু-একটা ঘটনা ছাড়া আমাদের রাজ্যে স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো। ৭৩ ভাগ মানুষ সরকারি হাসপাতালে যান। এটা ভারতের আর কোনও রাজ্যে নেই।

শিশু মৃত্যুর হার কমেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

পরিকাঠামোর কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আরও রাস্তা চাই, ব্রিজ চাই, উন্নত গ্রাম আর শহর চাই।

তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে অসংগঠিত শিল্পের শ্রমিকদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড গড়েছি। এর আওতায় এখন ২০ লাখ শ্রমিক। ১৫ লাখ স্বনির্ভর গোষ্ঠী যার মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ মহিলা কাজ করছেন।

বিরোধীদের সমলোচনা করে তিনি বলেন, রাজ্যে শান্তি চাই। এটা কী হচ্ছে? ৭০ দশক কায়েম করার অপচেষ্টা আমরা রুখবই। মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূল যোগ দিয়েছে। মাওবাদীরা একটা খুনে বাহিনী। ভেবেছে খুন করতে করতে দিল্লি দখল করবে। আমাদের মারছে বলে তৃণমূলের আনন্দ হচ্ছে। অনেকে বুঝতে পারছেন এখন এরা কী চাইছে।

মমতা ব্যানার্জীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, মা মাটি মানুষ মানে কী? যাত্রাপালা? ওই করলে বেকার চাকরি পাবে? যাত্রা করে কাজের ব্যবস্থা করা  যায় না। মানুষ বুঝতে পারছে সব। এবার আমরা ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে সরকার গঠন করব।

তবে এ দিন আত্মসমসালোচনাও করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

গত নির্বাচনগুলোতে বিরোধীদের জেতার কৃতিত্ব না দিয়ে তিনি বলেন, এই বিজয় তাদের নয়, আমাদের ভুলের জন্য এই হার। শিল্প করবো ভাল কথা, কিন্তু দ্রুত নয়। সবাইকে বুঝিয়ে করতে হবে। সিঙ্গুরের ঘটনার পর ৬ হাজার জমি অধিগ্রহণ হয়েছে শিল্পের জন্য কোথাও সমস্যা হয়নি।

তিনি বলেন, পার্টি কর্মীদের বলছি মানুষের ওপর মাতব্বরি করবেন না। মানুষের কাছে মাথা নিচু করে যান। সবাইকে বলছি হয় শোধরাও, নয় দল ছেড়ে চলে যান। হার হয়েছিল আমাদের জন্য। এই আত্মসমালোচনা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।