টোকিও: ফুকুশিমার ক্ষতিগ্রস্ত পরমাণু চুল্লির ফাটল দিয়ে অত্যধিক মাত্রার তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে পরমাণু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুল্লিগুলো এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ারের (টেপকো) মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, গতকাল (মঙ্গলবার) চুল্লির ফাটলে গলিত কাচ ও শক্তকরণ অনুঘটকের সংমিশ্রণ ঢোকানোর পর তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পরমাণু দুর্ঘটনার সময়ও একইভাবে ৬টি চুল্লির ফাটল বন্ধ করা হয়েছিল।
কাঠের গুড়ো ও পত্রিকার কাগজ দিয়েও দুই নম্বর চুল্লির ফাটল বন্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রকৌশলীরা।
এর আগে অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠা চুল্লির গলে যাওয়া ঠেকাতে বিপুল পরিমাণ পানি ঢালা হয়। এরপর চুল্লির ভেতরে স্থান ফাঁকা করতে প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ লিটার তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে বের করে দিতে হয়।
এর ফলে পার্শ্ববর্তী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের সমুদ্রসীমায় তেজস্কিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএইচএস গ্লোবাল ইনসাইটের এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক থমাস গ্রিডার বলেছেন, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
শীতলীকরণ ব্যবস্থার পুনরায় চালু করতে হলে যন্ত্রপাতির কোনো ক্ষতিসাধন না করে টারবাইন কক্ষের তেজস্ক্রিয় পানি বের করে দিতে হয়েছে।
তবে এটি সক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত চুল্লি গলে যাওয়া ঠেকাতে পানি ঢালতেই হবে। আবার পানি জমার জায়গা ফাঁকা করতে তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে আবার বের করে দিতেই হবে। ফলে সমুদ্রের পানি ব্যাপকভাবে তেজস্ক্রিয় দূষণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এর মধ্যেই সমুদ্রের পানিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ হাজার ৮০০ গুণ বেশি মাত্রায় তেজস্ক্রিয় আয়োডিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
সমুদ্রদূষণ এড়াতে তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে না ফেলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভাসমান ট্যাঙ্কার স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১৬ এপ্রিলের মধ্যে ট্যাঙ্কারটি পরমাণু চুল্লি এলাকায় পৌঁছবে। এছাড়া, টেপকো ট্যাঙ্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুল্লিগুলো শীতল করতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। সেই সঙ্গে একেবারে ধ্বংস হয়ে যাওয়া চুল্লিগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সরিয়ে নিতে কয়েক বছর লেগে যাবে।
টেপকো বলছে, ৬টির মধ্যে ৪টি চুল্লির কর্মকাণ্ড তারা বন্ধ করে দেবে। আরও জানায়, এক নম্বর চুল্লিতে হাইড্রোজেন গ্যাসের আধিক্য দেখা দিয়েছে। বিস্ফোরণ ঠেকাতে বুধবার রাতেই চুল্লিতে নাইট্রোজেন গ্যাস প্রবেশ করানো হবে।
এর আগেও এক ও তিন নম্বর চুল্লিতে হাইড্রোজেন গ্যাসের বিস্ফোরণের কারণে বাতাসে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল।
এদিকে, তেজস্ক্রিয় আতঙ্কে উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী দেশগুলো জাপান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অব্যাহতভাবে বিস্তারিত তথ্য চাচ্ছে।
এ নিয়ে বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োকিও এদানো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে যাতে আমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় সে ব্যাপারে আমরা বাণিজ্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১১