ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এন্টার্কটিকায় যে হারে বরফ গলতে শুরু করেছে, তাতে এই শতাব্দীতেই সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ ফুট (৩ মিটার) পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি এন্টার্কটিকা থেকে নাসার তোলা কিছু ছবি এবং সেখান থেকে সংগ্রহ করা কিছু নমুনা পরীক্ষার পর এমনই আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
নাসার হিবাস অনুযায়ী, গত দশক পর্যন্ত এন্টার্কটিকায় প্রতি বছর বরফ গলার হার ছিলো ১৩০ বিলিয়ন টন (১১৮ বিলিয়ন মেট্রিক টন)। এই ওজন ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের সমান এবং বরফ গলে যে পানি তৈরি হচ্ছে, তা দিয়ে ১৩ লক্ষ অলিম্পিক সুইমিং পুল ভরা যাবে বলে বলছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
সেই সাথে তারা আরো জানিয়েছেন, বরফ গলার হার দিন দিন বাড়ছে। এই হারে বরফ গলতে থাকলে এক অথবা দুই শতকের মাঝেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ ফুট (৩ মিটার) পর্যন্ত বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে নাসা।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ জেরি মিট্রোভিসা বলেন, এন্টার্কটিকার কিছু অংশে এত দ্রুত বরফ গলতে শুরু করেছে যে, এই জায়গাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে পরিণত হয়েছে।
নাসার জানিয়েছে, এন্টার্কটিক পেনিনসুলা এলাকায় উষ্ণতার হার সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র এই এলাকাতেই বছরে ৪৯ বিলিয়ন টন (প্রায় ৪৫ বিলিয়ন মেট্রিক টন) বরফ গলছে। গত অর্ধ শতাব্দীতে এই এলাকায় তাপমাত্রা ৫.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেড়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই হার পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে চিলির এন্টার্কটিক ইন্সটিটিউট।
গত মাসেই বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটে ধারণকৃত ছবিতে খেয়াল করেন, পেনিনসুলা এলাকায় বরফে ১২ মাইল (২০ কিলোমিটার) লম্বা ফাটল দেখা দিয়েছে।
নাসার বিজ্ঞানী এরিক রিগনট বলেন, বরফ গলার হার ধারণার চেয়েও দ্রুত হয়ে গেছে। এটা এখন ধাবমান বিপদে পরিণত হয়েছে।
বর্তমান বরফ গলার হারে প্রতি বছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিলিমিটারের তিন ভাগের এক ভাগ হারে বাড়ছে। আর এই গলনের বৃদ্ধির হার এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০০ থেকে ১০০০ হাজার বছরের মাঝে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন রিগনট। এই উচ্চতা বৃদ্ধি ১০০ বছরের মাঝেও হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আর এভাবে চলতে থাকলে নিউইয়র্ক এবং গুয়াংজুর মতো শহরগুলো বছরে বন্যাজনিত কারণে কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
রিগনট বলেন, আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের এই হার এখনই কমিয়ে আনার উদ্বোগ নিতে হবে। বরফ গলন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে সভ্যতাকে অনেক বড় মূল্য দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৫