ঢাকা: মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে বরাবরই পশ্চিমাদের কড়া সমালোচক মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। আবারও জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপভুক্ত দেশগুলোর নীতির সমালোচনা করেছেন তিনি।
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কথা বলছিলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) তার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। প্যারিসে আইএসের বর্বরোচিত হামলার পর যখন পশ্চিমা দেশগুলো একে একে আইএসবিরোধী অভিযানে যোগ দিচ্ছে, তখন এ কথা বললেন ড. মাহাথির মোহাম্মদ।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএস অধ্যুষিত অঞ্চলে বিমান হামলা আরও বাড়ালে এ অঞ্চলের সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়বে। কারণ, যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেললে কেবল আইএসের লোকেরা মরবে না, মরবে নিরীহ আরবরাও। যেহেতু সেখানে থেকে তারা (আরবরা) কিছু করতে পারছে না, তাই তারা আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবে, আর তার সুযোগ নেবে আইএস। বোমা ফেললে ওই নিরীহ মানুষগুলোও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আইএসে যোগ দেবে এবং তারা আরও ভয়ংকর কোনো পন্থায় আবির্ভূত হবে।
২২ বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০০৩ সালে প্রেসিডেন্টের আসন ছেড়ে দেওয়া মাহাথির বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা নীতির কারণেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে এবং এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে দিয়েছে।
ইরাক-সিরিয়া সঙ্কটের জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক মাহাথির বলেন, আমি সবসময়ই বলেছি, এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ফিলিস্তিনের জমি দখল করে ইসরায়েলকে দেওয়ার পর থেকে। তারা বসত-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট বানিয়ে ধীরে ধীরে পুরো ফিলিস্তিন দখল করে ফেলেছে। আরবরা পরে সেসব জমি ফেরত পেতে চাইলেও ব্যর্থ হয়, কারণ ইউরোপ ও আমেরিকা দখলদার ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর থেকে ইসরায়েল এ ধরনের (পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য) আন্তর্জাতিক অপরাধ করে যাচ্ছে। এটা জঘন্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের নীতি হলো ‘সন্ত্রাসীদের ওপর সন্ত্রাস’। ‘তোমরা যদি একজন ইসরায়েলিকে মারো, আমরা তোমাদের ১০ জনকে মারবো। তোমরা যদি ১০ জন ইসরায়েলিকে মারো, আমরা তোমাদের ১০০ জনকে মারবো। ’ ‘আমরা তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবো’। এটাই ইসরায়েল করছে। বিশ্ব এটা জানে এবং এটাই সহ্য করছে।
মাহাথির মোহাম্মদ মনে করেন, গেরিলা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচলিত যুদ্ধ চালানো যায় না, আকাশ থেকে বোমা ফেলে সমাধান আসে না। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের কিছু গেরিলা ছিল। গেরিলাদের ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা মানুষকে বুঝিয়েছি এবং তাদের সহযোগিতা না করতে বলেছি। এক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছে। এখন আমরা আরবদের সমস্যার সমাধান করছি না। এটা রাগ ও হতাশার কথা।
৯০ বছর বয়সী এ রাজনীতিক বিশ্ব সম্প্রদায়কে পরামর্শ দিয়ে বলেন, এখানে (ইরাক-সিরিয়ায়) আইএসকে নির্মূল করলে তারা অন্য কোথাও থেকে নতুনভাবে আবির্ভূত হবে। তাতে যুদ্ধক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে। তাই প্রতিশোধপরায়ণতা- আমাদের লোককে মারলে, আমরা তোমাদের লোককেও মারবো- নীতি দিয়ে সমাধান আসে না। খুঁজে বের করুন কেন এই লোকেরা (আইএস) এ ধরনের ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড করছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নতুন নতুন পদ্ধতি তারা দেখাচ্ছে। তারা এখন টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেও সন্ত্রাসী তৎপরতা দেখাচ্ছে। পুরো বিশ্ব ভীত। মুসলিমবিশ্ব ভীত। তারা কেবল সৈন্যদের মারছে না, যে কাউকেই মারছে, নিরীহ লোকদের পুরো বিশ্বের সামনে (ভিডিও) গলা কাটছে।
তিনি শরণার্থী সমস্যার বিষয়ে বলেন, একটি অঞ্চল বা দেশের ওপর সমস্যা চাপিয়ে না দিয়ে আমরা যদি সবাই এটা (শরণার্থী) ভাগ করে নিই, তবে তার সহজ সমাধান হয়ে যাবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার লোকদের আশ্রয় দেওয়াই এখন তাদের কার্যকর সহযোগিতা। বোম ফেলে তাদের উদ্ধারের ভনিতা করা কাজে দেবে না। সমস্যাটা মাটিতে, আকাশে নয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
এইচএ/