ট্রাম্পের এক মাসের কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত ছিলো মুসলিম নিষেধাজ্ঞা ইস্যু। গত ২৭ জানুয়ারি পেন্টাগনে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী, অভিবাসী ও ভ্রমণকারী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এক নির্বাহী আদেশে সই করেছিলেন।
যেখানে সিরিয়া, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন এই সাত মুসলিম প্রধান দেশের অভিবাসী ও শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ট্রাম্প হয়তো ভেবেছিলেন তিনি যেহেতু প্রেসিডেন্ট তাকে ঠেকায় কে? তার সেই ধারণাতে চপেটাঘাত করেছেন তার দেশেরই আদালত।
ট্রাম্পের এই মুসলিম নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ দেন দেশটির ফেডারেল আপিল আদালত। এতে ট্রাম্পের এক ধরনের আক্কেল গুড়ুম হলেও ক্ষান্ত হননি তিনি। কিছুদিন বিরতি দিয়ে ফের সুর তুলেছেন- আগামী সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যুতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিভাসীদের জন্য নতুন আশঙ্কা ও সর্বনাশের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এছাড়া নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে ট্রাম্প তার দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ তাড়িয়ে দেওয়ার যে কথা বলেছেন। সেটা বাস্তবায়ন হলে দুঃখের আর সীমা থাকবে না সে দেশের অভিবাসীদের। তাই ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ট্রাম্পবিরোধী সচেতন মানুষ ও অভিবাসীরা বিক্ষোভ করেছেন। ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট মানেন না বলেও স্লোগান দিয়েছেন। ট্রাম্প শাসনের একমাস পূর্তি উপলক্ষেও দেশটিতে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে।
এরইমধ্যে ট্রাম্পের কাজ, নীতি ও পদ্ধাতি পছন্দ না হওয়ায় তার ১৬ জন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন। তার বিতকির্ত কর্মকাণ্ডে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ পদের অফার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন ৬০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ভাইস অ্যাডমিরাল রবার্ট হারওয়ার্ড।
বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ টিপিপি (ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ) বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চুক্তিভুক্ত ১২টি দেশ নাখোশ হয়েছে। টিটিপি চুক্তিভুক্ত মেক্সিকো, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড, ব্রুনাই দারুস সালাম, চিলি, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলো, তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
চলতি সপ্তাহে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের যা তা গালিগালাজ করেছেন। মিডিয়াকে ‘অসৎ’ ও ‘অসভ্য’ তকমা দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলেও মন্তব্য করেছেন। প্রথম থেকেই মিডিয়া ট্রাম্পের নারীঘঠিত কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন খবর প্রকাশ করায় মিডিয়ার প্রতি ভীষণভাবে ত্যক্ত-বিরক্ত তিনি। মিডিয়াকে জনগণের শক্র এবং উন্নয়নের পথে বাধা বলেও উল্লেখ করেন মিডিয়াবিরোধী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
গত ২৫ জানুয়ারি ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে নির্বাহী আদেশে সই করেন। আমেরিকান জনগণ বা বিশেষজ্ঞদের কোনো ধরনের মতামত না নিয়ে স্রেফ নিজস্ব সিদ্ধান্তে ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে নির্বাহী আদেশে সই করেন। যা ট্রাম্পকে আরও বেশি কলঙ্কিত করেছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
একমাসের শাসনামেলে অপরাধীদের শাস্তির বিশেষ ব্যবস্থা বিতর্কিত ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ ফিরিয়ে আনার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন ট্রাম্প। ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ হচ্ছে অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় শাস্তির বিশেষ প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে অপরাধীর নাকে-মুখে পানি ঢেলে মৃত্যুর ভয়াবহ বুঝিয়ে প্রয়োজনীয় গোপান তথ্য বের করে আনা হয়। এ প্রক্রিয়াটি তুমুল বিতর্কের মুখে ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার পর নিষিদ্ধ করা হয়। ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ চালু হয়েছিলো বুশের শাসনামলে।
ট্রাম্পের জনবিরোধী একঘেয়েমি কর্মকাণ্ডে জনরোষ দেখা দিয়েছে। আর তা যে কোনো মুহূর্তে ভয়ংকরভাবে ফুঁসে উঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে- অভিশংসনই কি ট্রাম্পের লাগাম টানতে অনিবার্য হয়ে উঠেছে?
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
টিআই