সম্মেলনে ট্রাম্প এমন এক নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন যার বিরুদ্ধে রয়েছে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগের তীর। পুরো বিশ্বের দৃষ্টি এখন ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের দিকে।
ধারণা করা হচ্ছে জি-২০ সম্মেলনের সাইড লাইন বৈঠকে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প মূলত সিরিয়া যুদ্ধ ও ইউক্রেন সংকট নিয়ে কথা বলবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হ্যাকাররা কিভাবে হস্তক্ষেপ করেছে সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না তা নিশ্চিত নয়। নির্বাচনে কোন ধরনের সাইবার হামলার বিষয় বরাবরই প্রত্যাখান করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
জামানির হামবুর্গের সম্মেলনে যোগদানের পূর্বে সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী পাওলো গেনতিলনি এর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন ট্রাম্প।
ফোনালাপকালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মার্কেল। জলবায়ু ইস্যুটি নিয়ে জি-২০ সম্মেলনেও বিতর্কে জড়াতে পারেন এই দুই নেতা।
তবে অনেকের কাছেই সম্মেলনের মূল আকষর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক। রাশিয়ার সঙ্গে নিবাচনে আঁতাত প্রসঙ্গে বেশ কিছু তদন্তের মোকাবেলা করতে হচ্ছে ট্রাম্পের নির্বাচনী উপদেষ্টাদের।
যদি বৈঠকে ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে বেশি সখ্যতা দেখান তাহলে সমালোচকরা কিন্তু ছাড় দেবে না তাকে। পুতিন ও ক্রেমলিনের প্রতি ট্রাম্পের সুর খুব নরম বলেই বৈঠকটিকে মূল্যায়ন করবেন তারা। অন্যদিকে তিনি যদি শীতল বা অবন্ধুত্বসুলভ আচরণ করেন তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোড়া লাগানোর সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। দু’দেশের সম্পর্ক খুব দৃঢ় নয় বলেই প্রচার করে আসছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এটিই প্রথম বৈঠক কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। গত অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট বিতর্কের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি কখনো পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেননি। তবে অতীতে বেশ কবারই দুজন একে অপরকে দেখে পাশ কাটিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। জনসম্মুখে বেশ কবারই পুতিনের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। আর পুতিনও কম যাননি। ট্রাম্পকে মেধাবী ও বুদ্ধিমান নেতা বলে মন্তব্য করেছেন।
বৈঠকের টেবিলে কি আলোচনা হবে তা নিয়ে সম্ভবত খুব সতর্ক হোয়াইট হাউস। তারা কিছুই খোলাসা করছে না। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ট্রাম্প ও পুতিন বৈঠকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে রাশিয়া। আর তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় দেশটিকে। তৎকালীন ওবামা প্রশাসন ও অন্যান্য দেশ রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকের কোন নির্ধারিত এজেন্ডা নেই। আসলে প্রেসিডেন্টের যা ইচ্ছা করবে তিনি তা নিয়েই কথা বলবেন। তিনি জানান, কর্মকর্তাদের বারণ করা হয়েছে তারা যেন রাশিয়ার সাইবার হুমকি ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে কোন কথা না বাড়ায়। আলোচনার অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে এটাও আসতে পারে যে, কিভাবে উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরকে সহায়তা করবে।
দুই নেতা কি বলবেন তা নিয়ে হোয়াইট হাউস মুখ বন্ধ করে থাকার ভান করলেও রাশিয়া বৈঠকের বিষয়ে কিছু ইংগিত দিয়েছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার দুটি কূটনৈতিক কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়, পাশাপাশি বহিষ্কার করা হয় বেশ কয়েকজন রুশ কূটনৈতিককে। ওই কূটনৈতিক কেন্দ্র আবারও চালুর দাবি করতে পারেন পুতিন।
পুতিনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি ইউসাকব সোমবার যথেষ্ট কড়া সুরে জানিয়েছেন, কূটনৈতিক বহিষ্কারের ঘটনার পরও অস্বাভাবিক নমনীয়তা দেখিয়েছে রাশিয়া। আমরা পাল্টা কোন ব্যবস্থা নেইনি। তবে রাশিয়ারও ধৈর্য্যের একটা সীমা রয়েছে।
তিনি ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, পাল্টা পদক্ষেপ নিতে হয় রাশিয়াকে এমন পথে ঠেলে দেবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৭
জিওয়াই/আরআই