ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভার্জিনিয়ায় সংঘাত নিয়ে মন্তব্যে সমালোচনায় ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
ভার্জিনিয়ায় সংঘাত নিয়ে মন্তব্যে সমালোচনায় ট্রাম্প ট্রাম্প ফের সমালোচনায়

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের শারলটসভিল শহরে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের সঙ্গে তাদের বিরোধীদের সংঘাত নিয়ে ‘দায়িত্বহীন’ মন্তব্য করায় সমালোচনায় পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দল রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকরাই ‘ভাষা ঠিক’ করতে বলছেন প্রেসিডেন্টকে।

শনিবার (১২ আগস্ট) শারলটসভিলে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের সঙ্গে তাদের বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংঘাতের ঘটনায় অন্তত তিনজন নিহত হন। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় ভার্জিনিয়ায় জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।

সংঘাতে পরপরই নিউজার্সিতে একটি গলফ রিসোর্টে ছুটিতে থাকা প্রেসিডেন্ট সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিদ্বেষ, গোঁড়ামি ও সহিংসতার এই কুখ্যাত প্রদর্শনীর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। এই হিংসা ও বিভাজন এখানেই বন্ধ হওয়া উচিত। আমাদের আমেরিকানদের জাতির জন্য ভালোবাসা থেকেই একতাবদ্ধ হওয়া উচিত। ’

ট্রাম্পের মুখে উচ্চারিত এই ‘বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে’ শব্দ তিনটি নিয়েই চটেছেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান রাজনতিকরা। অনেকে বলছেন, এরমাধ্যমে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের আগ্রাসনকে প্রশ্রয় দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিপাবলিকান সিনেটর কোরি গার্ডনার বলেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট- দুর্বৃত্তদের তাদের নামেই ডাকা উচিত আমাদের। সহিংসতায় জড়িতরা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী এবং এটা অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ। ’

আরেক রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও টুইট করে ট্রাম্পকে বলেন, ‘শারলটসভিলের ঘটনায় ট্রাম্প জড়িতদের নিয়ে কী বলেছেন, তা শোনা জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এটা ছিল শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের সন্ত্রাস। ’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘটনাটিকে ‘বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘাত’ বললেও টেড ক্রুজ ও অরিন হ্যাচের মতো সিনেটররাও এটিকে ‘অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস’ বলে উল্লেখ করেন।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আমেরিকার গৃহযুদ্ধকালের দাসপ্রথার পক্ষে লড়াইকারী কনফেডারেট জেনারেল রবার্ট ই লির ভাস্কর্য অপসারণকে কেন্দ্র করে শনিবার ওই সংঘাত বাঁধে।  

সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ জেনারেল লি’র ভাস্কর্য অপসারণ করতে গেলে উগ্র শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা দাবি করে, ‘স্বাধীনতা ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির এই প্রতীক’ সরানো যাবে না। এই দাবির পক্ষে সোচ্চার হয়ে শনিবার তারা ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সমাবেশের আয়োজন করে। অপর দিকে ভাস্কর্যটিকে ‘দাসপ্রথার মূল’ ধরে এর অপসারণের পক্ষে বিরোধীরাও নামে বিক্ষোভে।

উগ্র শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের মিছিলটি যখন ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থমাস জেফারসনের ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন সেখানে অবস্থানরত বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীরাও স্লোগান তোলে। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সেসময় একটি দ্রুতগামী গাড়ি বর্ণবাদবিরোধীদের ওপর চালিয়ে দেওয়া হয়, এতে ঘটনাস্থলেই এক নারী নিহত ও ১৯ জন আহত হয়।  

সেসময় হেলিকপ্টার নিয়ে ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান দুই কর্মকর্তাও। যদিও হেলিকপ্টারটি বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানা যায়নি।

এরপর পুলিশ অ্যাকশনে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে তৎপর হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার নামানো হয় অতিরিক্ত পুলিশ এবং ভার্জিনিয়াজুড়ে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।

সংঘাতের পর শারলটসভিল শহরের মেয়র সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘হত‍াহতের ঘটনা দুঃখজনক। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের এই মিছিল বর্ণবাদী। ’

১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ হয় ওয়াশিংটনের কেন্দ্রীয় বাহিনী ও দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি স্টেটের কনফেডারেট বাহিনীর মধ্যে। যুদ্ধে দাসপ্রথার পক্ষের শ্বেতাঙ্গ কনফেডারেটরা পরাজিত হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে। এতে দাসপ্রথার বিলুপ্তি হয়।

এরপরও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক শহরে কনফেডারেটদের কিছু প্রতীক রয়েছে। কিন্তু এতোদিন ধরে এই প্রতীক ভাঙা বা সরানো নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য না হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।