বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) মিয়ানমার সেনাপ্রধানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তার এ বক্তব্য উঠে আসে। সশস্ত্র বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন জেনারেল হ্লাইং।
জেনারেল হ্লাইং দাবি করেন, রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযান ছিল সমানুপাতিক। সেনাবাহিনীর তৎরতার ফলেই বরং শরণার্থী ঢল নিম্নমুখী ছিল।
রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবেই পুনরায় আখ্যা দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা অনেক বেশি বলাটা অতিরঞ্জন। এই অতিরঞ্জন ও অপপ্রচার চালাচ্ছে গণমাধ্যম।
অবৈধ অভিবাসী প্রমাণ করার জন্য এবং তাদের নাগরিক অধিকার বঞ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের কৌশলগত কারণে দীর্ঘদিন ধরে ‘বাঙালি’ আখ্যা দিয়ে আসছে।
এই কথাটিই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে জেনারেল হ্লাইং বলেন, বাঙালিদের আদি-নিবাস হলো বাংলা (বাংলাদেশ)। সেজন্যই ভাষা, বর্ণ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল আছে এবং নিরাপদবোধ করে- এমন কোনো দেশে তারা পালিয়ে থাকতে পারে।
রোহিঙ্গারা ব্রিটিশ শাসনের অনেক আগে থেকেই রাখাইনের (তৎকালীন আরাকান) বাসিন্দা হলেও মিয়ানমার সেনাপ্রধানের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের আদি-বাসিন্দা হলেও ব্রিটিশ শাসকেরা তাদের রাখাইনে ঢুকিয়ে দিয়েছে। মিয়ানমারে তাদের বংশ পরম্পরার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
বুধবারই (১১ অক্টোবর) প্রকাশিত জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে শারীরিক, আবেগী ও মনস্তাত্ত্বিক ভয় ও মানসিক আঘাত গভীর ও বিস্তৃতভাবে গেঁথে দিতেই নৃশংসতার ভয়ানক কৌশল নিয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
এতে আরও বলা হয়, ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে সহিংসতার মুখে সেখান থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে ৫ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রাখাইনের এই অভিযানকে জাতিসংঘ আগে থেকেই ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বললেও সেখানে কতোজনকে হত্যা করা হয়েছে, এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভাষ্যমতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। ধর্ষণ করেছে শত শত রোহিঙ্গা কিশোরী-তরুণী ও গৃহবধূকে।
এই গণহত্যায় যেমন বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হচ্ছেন মিয়ানমারের কার্যত সরকারপ্রধান অং সান সু চি। তেমনি গণআদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হচ্ছেন জেনারেল হ্লাইং ও তার সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
এইচএ/