ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দাবানলে স্বামীর বাহুডোরে মারা গেলেন বৃদ্ধা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
দাবানলে স্বামীর বাহুডোরে মারা গেলেন বৃদ্ধা আরমান্দো ও কারমেন বেরিজ দম্পতি (ছবি: সংগৃহীত)

পুরো পরিবার উচ্ছ্বাসে-উল্লাসে অবকাশ যাপন করছিল ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা রোজা শহরতলীর রিসোর্ট মতোন অনিন্দ্য সুন্দর বাড়িটিতে। ৭৬ বছর বয়সী আরমান্দো, তার স্ত্রী ৭৫ বছর বয়সী কারমেন বেরিজ, তাদের মেয়ে মনিকা অকন, জামাতা লুইস অকন ও একমাত্র কন্যা। নৈশভোজের পর খোশগল্প করে সবাই যার যার মতো ঘুমাতে গেল। ঘুমাতে গেলেন আরমান্দো দম্পতিও।

রাত ১টার দিকে লুইসের ঘুম ভেঙে গেল। জানালা দিয়ে তার চোখ গেল বাইরে।

মনে হলো আকাশে আগুন ধরেছে। লুইস উঠে বারান্দার দিকে আসতেই দেখলেন, একটা জ্বলন্ত অঙ্গার উড়ে এসে সামনের ঘরটার কাচের জানালায় পড়লো। সেটা মুহূর্তেই বারান্দার সামনে পড়ে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকলো। মনে হলো বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

৩০-৪০ সেকেন্ডও সময় লাগলো না। লুইস দেখতে লাগলেন, বাড়ির চারপাশে দাউ দাউ দাবানলে জ্বলছে। আকাশ অগ্নিলাল হয়ে গেছে। দৌড় লাগালেন নিজের আর মেয়ের শোবার ঘরে। গেলেন তার শ্বশুর-শাশুড়ীর ঘরেও। সবাইকে জাগিয়ে তুললেন।

বাড়ির সামনে রাখা একটি গাড়িতে লুইস উঠিয়ে দিলেন কন্যা আর স্ত্রীকে। আর একটি গাড়িতে উঠলেন তিনি। তৃতীয় গাড়িতে উঠলেন বয়স্ক আরমান্দো-কারবেন।

যেন ভয়ঙ্কর কোনো চলচ্চিত্রের দৃশ্য। চারপাশ থেকে উড়ে উড়ে এসে সামনে পড়ছে জ্বলন্ত অঙ্গার। আর পাশ কাটিয়ে গাড়ি ছুটছে নিরাপদ আশ্রয় পানে। ছুটছে তো ছুটছেই।

একটি নিরাপদ জায়গায় পৌঁছানোর পর লুইস-মনিকারা খেয়াল করলেন, পেছনে তাদের বৃদ্ধ মা-বাবাদের গাড়ি দেখা যাচ্ছে না। লুইস স্ত্রী-কন্যাকে তার এক বন্ধুর বাড়ি পাঠিয়ে ফের পেছনে ছুটতে থাকেন।

পথে তার দেখা হয় কিছু দমকলকর্মীর সঙ্গে। লুইস তাদের কাছে শ্বশুর-শাশুড়ীকে না পাওয়ার কথা জানালে দমকলকর্মীরা জানান, রাস্তা দাবানলের কবলে পড়েছে। হয়তো বৃদ্ধ দম্পতি আটকা পড়েছেন। তারা ওই দম্পতিকে উদ্ধারের চেষ্টা করবেন। লুইস ভেতরে যেতে চাইলেও তাকে বাধা দেওয়া হয়।

তারপর কী হলো? তারপরের ঘটনাটা ভালোবাসার, প্রেমের, মধুর দাম্পত্যের, নির্ভরতার। কিন্তু হৃদয়স্পর্শী বিয়োগান্তক।

লুইস বলছিলেন, ‘আমাদের সঙ্গেই আসার পথে তাদের গাড়ি একটু পিছিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সড়কজুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়লে তারা সামনে এগোতে ব্যর্থ হন। অগত্যা বাড়ি ছুটে যান, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য’।

‘চারপাশে দাবানল জ্বলছিল বলে তারা বাড়ির ভেতরের সুইমিংপুলে নেমে যান। কিন্তু তীব্র ধোঁয়ার কারণে সেখানেও ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তাদের। আগুনের তীব্রতায় সুইমিংপুলও গরম হয়ে যায়। দু’জন একবার এদিকে যান, একবার ওদিকে যান। বারবার প্রার্থনা করতে থাকেন জীবনে বাঁচার জন্য। ’

‘একজন আরেকজনকে সাহস দিতে থাকেন। উত্তাপ থেকে বাঁচতে ডুব দিতে থাকেন। আবার শ্বাস নিতে নাক ওপরে ভাসাতে থাকেন। এমন করতে করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন কারমেন। কেন যেন ভয়ও পেয়ে যান। তিনি আরমান্দোকে বলেন তাকে জড়িয়ে ধরতে। ৫৫ বছরের বন্ধনে থাকা স্ত্রীকে বাহুডোরে বেঁধে নেন আরমান্দোও। ’

‘সময় গড়াতে থাকে। দাবানল শান্ত হলে সকালের দিকে ওই বাড়িতে আসেন দমকলকর্মীরা। তারা সেখানে গিয়ে দেখেন, আরমান্দো কাঁপছেন। কিন্তু তার একটি হাত পুড়ে গেছে। আর বাহুডোরে থাকা কারমেন পুরো নিশ্চুপ-নিথর। মারা গেছেন তিনি। ’

দমকলকর্মীরা আরমান্দোকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করেন। লুইস-মনিকাদের খবর দেন তাকে উদ্ধারের এবং কারমেনের মৃত্যুর।

শ্বশুরের কাছে শুনে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেওয়া লুইস বলেন, হাসপাতালে আমরা যাওয়ার পর তিনিই আমাদের উল্টো সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।

মনিকা বলেন, পুরো দাম্পত্য জীবনে তাদের খুব কমই মনোমালিন্য দেখেছি। দু’জন পরস্পরকে ভালোবাসতেন খুব। মা এই ভালোবাসার বাহুডোরে থেকেই বিদায় নিলেন। সম্ভবত তীব্র ধোঁয়ার কারণে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনি।

ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে ৩৫ জনের প্রাণঘাতী ভয়াবহ দাবানলের খবরের মধ্যে সবার হৃদয়স্পর্শ করেছে এই ঘটনাটিই।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।