সোমবার (৬ নভেম্বর) নিরাপত্তা পরিষদ ওই বিবৃতি দেওয়ার দু’দিন পর বুধবার (৮ নভেম্বর) সু চি’র কার্যালয়ের পক্ষ থেকে পাল্টা বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে ৬ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর এমন সামরিক বলপ্রয়োগ ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়া বিবৃতিতে (প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট) বলা হয়, রাখাইনে আর সামরিক বলপ্রয়োগ হবে না বলে মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে সেখানে বেসামরিক প্রশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ, নারী-শিশু ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর অধিকারসহ মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং জাতি, ধর্ম ও নাগরিকত্বের বৈষম্য বিলোপের ব্যবস্থা নিতে হবে।
জবাবে শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি’র কার্যালয়ের তরফ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, এই সংকট বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারই দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করতে পারে। তার দাবি, এই বিষয়টিই নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে দু’বছর ধরে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে স্টেট কাউন্সেলর পদে থাকা সু চি রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় শুরু থেকেই তুমুল সমালোচনায় পুড়ছেন। এই হত্যাযজ্ঞে সেনাবাহিনী বর্বরতা দেখালেও সু চি বরাবরই তাদের আড়াল করেছেন বলে বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।
সেনাবাহিনীকে ফের আড়াল করার সুরেই একসময় ‘মানবাধিকার আন্দোলনের নেত্রী’ বলে পরিচিতি পাওয়া সু চি বিবৃতিতে বলেন, দু’দেশের মধ্যে (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) সংকট সমাধানে (রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন) দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার কার্যক্রম সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে চললেও নিরাপত্তা পরিষদ এই প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট দেওয়ায় তা সম্ভবত এবং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মিয়ানমার নেত্রীর বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সমঝোতা কার্যক্রম চলছে। এরই অংশ হিসেবে হিসেবে আগামী ১৬-১৭ নভেম্বর মিয়ানমারে আসছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও। তার আগের দিন এই ইস্যুতে কথা বলতে দেশটিতে যাবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও।
মিয়ানমারের দুই পরীক্ষিত মিত্র রাশিয়া ও চীন থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্টটিকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ভেটো ক্ষমতার অধিকারী দু’টি দেশই বিবৃতিতে একমত পোষণ করে। তবে তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এই ব্যাপারটিকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে সু চির বিবৃতিতে।
বাংলাদেশ বরাবরই রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার এই জনগোষ্ঠীকে ‘অনুপ্রবেশকারী বাঙালি’ বলে বঞ্চিত করে আসছে। নানাসময়ে নির্যাতন-নিপীড়ন চললেও গত আগস্ট থেকে এই বর্বরতা মারাত্মক রূপ নেয়। কেবল আগস্ট থেকে এ পর্যন্তই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় সোয়া ৬ লাখ রোহিঙ্গা। ১৯৭৮ সালের পর নানা সময়ে এসেছে আরও ৫ লাখ। এদের ফেরাতে ঢাকা আহ্বান জানিয়ে এলেও নাইপিদোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে ‘নিশ্চিত পরিচয়’ পাওয়ার তাদের ফেরত নেওয়া হবে।
কিন্তু এ বিষয়েই শঙ্কা রয়েছে ঢাকার। কারণ মিয়ানমার দাবি করে আসছে, রোহিঙ্গাদের ব্রিটিশ শাসনকালে রাখাইনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ ঐতিহাসিকদের মতে, ব্রিটিশ শাসনেরও অনেক আগে থেকে আরাকানে তথা বর্তমান রাখাইনে বসবাস করে আসছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৭/আপডেট ১৩২৩ ঘণ্টা
এইচএ/