ঢাকা, রবিবার, ৯ ভাদ্র ১৪৩২, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

১১ নভেম্বর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি

রাইসুল ইসলাম, রাইসুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৯, নভেম্বর ১১, ২০১১
১১ নভেম্বর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি

ঢাকা: আজ ঐতিহাসিক ১১ নভেম্বর। ১৯১৮ সালের এই দিনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

মিত্রশক্তি এবং জার্মানির মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে কার্যত ইতিহাসের এই ভয়াবহতম যুদ্ধ শেষ হয়।

চুক্তিতে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর সকাল ১১টা থেকে এই  অস্ত্রবিরতি কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। কাকতালীয়ভাবে সময়টি মিলে যায়, বছরের ১১তম মাসের ১১ তারিখ সকাল ১১টা।

এই দিনটি স্মরণ করার জন্য শুক্রবার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই দিনকে তৎকালীন মিত্রশক্তির অনেক দেশই সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেছে।

১৯৫০ সাল পর্যন্ত ১১ নভেম্বরকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাদের সম্মানে অস্ত্রবিরতি দিবস হিসেবে পালন করা হত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং কোরিয়া যুদ্ধের পর এই দিনকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এদিন সব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাদের সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

সেদিনের ওই অস্ত্রবিরতি চুক্তির শর্ত ছিল, শত্রুদেশের সীমান্ত থেকে জার্মানিকে তার সব সেনা অতি দ্রুত প্রত্যাহার, নিরস্ত্রকরণ এবং জার্মান সেনাবহিনীকে দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। সেই সঙ্গে জার্মানির হাতে আটক মিত্রশক্তির সব যুদ্ধবন্দিকে নি‍:শর্ত মুক্তি দিতে হবে।

এই অস্ত্রবিরতি চুক্তির বেশির ভাগ শর্তই ছিল জার্মানির জন্য চরম অবমাননাকর। কিন্তু এটি গ্রহণ না করে তাদের কোনও উপায় ছিল না।

এই চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যেই জার্মানির অন্য মিত্ররা মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে। যুদ্ধে জার্মান বাহিনী প্রায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

জার্মানিকে অবাঞ্ছিত যুদ্ধে ঢেলে দেওয়া তৎকালীন শাসক কাইজার উইলহেম ১০ নভেম্বর সিংহাসন ত্যাগ করেন। ফ্রেডারিক এবার্টের নেতৃত্বে নতুন সরকার শান্তির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।

সে সময় টাইম সাময়িকীতে এবার্টের একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, তার সরকার জার্মান জনগণের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব শান্তি স্থাপনের সম্ভাব্য সব উদ্যোগ নেবে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তিটির খসড়া মিত্রশক্তির সদস্য ফ্রান্সের একটি যুদ্ধক্ষেত্র কমপেন জংগলে তিনদিন ধরে প্রস্তুত করা হয় । তবে স্থায়ী শান্তি চুক্তির উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করা হয়নি।

পরে মিত্র শক্তির চার প্রধান শরিক (ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি) প্যারিসে একটি আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তির জন্য মিলিত হয়। কিন্তু সেখানে জার্মানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

পরে ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির ওপর বিভিন্ন অবমাননাকর শর্ত আরোপ করা হয়। কিন্তু দূর্বল হয়ে পড়া জার্মানি সব শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়।

প্রথম মহাযুদ্ধকে তৎকালীন অনেকেই সকল যুদ্ধের সমাপ্তি হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ এই যুদ্ধের ভয়াবহতা, ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রাণহানি পুর্ববর্তী সব যুদ্ধকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের এই আশা অচিরেই দূরাশায় পরিণত হয়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের অবমাননাকর শর্তে ক্ষুব্ধ জার্মান জনগণ এডলফ হিটলারের নেতৃত্বে আবারো যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সেই কমপেন জংগলেই ফ্রান্সকে অবমাননাকর যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করে জার্মানি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।