ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

এক ছবির দামই শত কোটি, কে এই অজ্ঞাত শিল্পী বাঙ্কসি! 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৯
এক ছবির দামই শত কোটি, কে এই অজ্ঞাত শিল্পী বাঙ্কসি! 

সমকালীন বিশ্বের রাজনৈতিক সমালোচনামূলক ছবি এঁকে দুনিয়াজুড়েই তুমুল আলোচিত যুক্তরাজ্যের শিল্পী বাঙ্কসি। কিন্তু কেউ কখনো দেখেনি এ শিল্পীকে। গেরিলার মতো গোপনে, সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছবি এঁকে রাতারাতি লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। ছবি ও ভাস্কর্য এঁকে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশের বিপ্লবী, সংগ্রামী জনতার সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন এ শিল্পী। 

বাঙ্কসির কাজের ধরন ভিন্ন। হয়তো আগের সন্ধ্যায় কোনো শহরের একটি দেয়াল ফাঁকা পড়েছিল, পরদিন সকালেই দেখা গেল সেই দেয়ালের এ মাথা থেকে ও মাথা শোভা পাচ্ছে তার বিশাল সাইজের এক গ্রাফিত্তি।

আর তাতে তুলে ধরা হয়েছে আধুনিক সমাজব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে হরেক সমালোচনা।  

তুমুল ব্যঙ্গ ও সমালোচনার জন্য ক্ষমতাশালীদের চোখের কাঁটা বাঙ্কসির শিল্পকর্ম। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য তার সহানুভূতির শেষ নেই। সব মিলিয়ে তার ব্যাপারে ব্যাপক কৌতূহল মানুষের। কিন্তু কখনোই তিনি প্রকাশ্যে আসেননি। আত্মগোপনে থেকে ধ্যানীর মতোই একের পর এক কাজ করে চলেছেন এ শিল্পী।  

বাঙ্কসির চিত্রকর্ম

সম্প্রতি ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’ শিরোনামে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য ও প্রবণতারই বেশ কিছু সিরিজ গ্রাফিত্তি (দেয়ালচিত্র) দেখা যায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে। সেসব নিয়ে রাজধানীবাসীর মধ্যে তৈরি হয় ব্যাপক আগ্রহ। এ শিল্পীও বাঙ্কসির মতোই চুপিসারে রাতের অন্ধকারে ছবিগুলো এঁকে হাওয়া হয়ে যান। নতুন করে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সারা দুনিয়াতেই এ ধরনের শিল্পকর্ম ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রাফিত্তির এই নবজাগরণের পেছনে কিংবদন্তি শিল্পী বাঙ্কসির অবদান অনস্বীকার্য।  

সম্প্রতি এ শিল্পীরই একটি ছবি নিলামে একশ’ কোটি টাকারও (৯.৯ মিলিয়ন পাউন্ড) বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।  

খবরে বলা হয়, ক্যানভাসে আঁকা ১৩ ফুট প্রস্থ ও ফুট ছয়েক দৈর্ঘ্যের ছবিটির নাম ‘ডেভলপড পার্লামেন্ট’। এতে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউজ অব কমন্স’-এ মানুষের বদলে বসে আছে একপাল শিম্পাঞ্জি। তারাই চালাচ্ছে রাষ্ট্র।  

বাঙ্কসির চিত্রকর্ম

বিবিস জানায়, সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক করপোরেশন সোথবে এটিকে নিলামে তোলে। ধারণা করা হচ্ছিল ছবিটি দেড় থেকে দুই মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হবে। কিন্তু শেষমেশ প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি দামে এটি বিক্রি হয়।

পার্লামেন্টে শিম্পাঞ্জি ছবিটির মধ্য দিয়ে মূলত যুক্তরাজ্যের জনপ্রতিনিধিদের এক শৈল্পিক চপেটাঘাত করেছেন বাঙ্কসি।  

ছবিটির নিলাম প্রতিষ্ঠান জানায়, যুক্তরাজ্যের চলমান ব্রেক্সিট ইস্যুতে আপনি যে পক্ষেই থাকুন না কেন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, বাঙ্কসির চিত্রকর্ম এই মুহূর্তে এ ইস্যুতে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। এই প্রাসঙ্গিকতাই ছবিটি এতো চড়া মূল্যে বিক্রি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।  

টুইটারে এক পোস্টে সোথবে জানায়, ১৩ মিনিটের এক নিলামযুদ্ধে আগের চেয়ে ৯ গুণ বেশি দামে ৯৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ পাউন্ডে ডেভেলপড পার্লামেন্ট ছবিটি বিক্রি হয়।  

বাঙ্কসির চিত্রকর্ম

নিলামের পরপরই প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র অ্যালেক্স ব্রাঞ্জিক জানান, বাঙ্কসি দিনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার জন্ম দিলেন। এ শিল্পী একটিমাত্র সরল বর্ণনাত্মক ছবি দিয়ে যেন আমাদের সবচেয়ে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।   

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে যুক্তরাজ্যে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কিছুদিন আগেও এই অচলাবস্থা কাটাতে পার্লামেন্ট স্থগিত করেন। পরে আদালত আবার তা অবৈধ বলে পার্লামেন্ট চালু করে। অন্যদিকে বরিসের বিরোধীরা তাকে পদত্যাগের জন্য বলছে। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যেন বাঙ্কসির ছবিটির মতোই হয়ে উঠেছে।  

বাঙ্কসির চিত্রকর্ম

২০০৯ সালে ব্রিস্টল জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য বাঙ্কসি ‘ডেভলপড পার্লামেন্ট’ শিরোনামের এ ছবিটি এঁকেছিলেন। সেবার ৩ লাখ দর্শনার্থী ওই প্রদর্শনীতে যান। আর তা ছিল ওই বছরের সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীবহুল প্রদর্শনীগুলোর অন্যতম।  

এদিকে এতো দামে ছবি বিক্রির প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে বাঙ্কসির এক অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়, ‘বাঙ্কসির কোনো ছবির জন্য এটি রেকর্ড মূল্য। ধিক্কার, আমি এটির মালিক নই। ’

সরেস এই মন্তব্যও ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যে বাঙ্কসির এক ধরনের কটাক্ষ। ব্যাপারটি অনেকটা এমন যে, ‘যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই’। অর্থাৎ, মূল শিল্পীই অজ্ঞাত, আর অন্যরা কিনা তারই ছবি বিক্রি করে বেড়াচ্ছে শত শত কোটি টাকায়! 

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৯
এইচজে/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।