আফগান তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদার বুধবার চীন সফরে গেছেন, আর সেখানে পৌঁছেই উত্তরাঞ্চলীয় তিয়ানজিং শহরে তিনি বৈঠক করেছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে।
চীন বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানের মাধ্যমে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে, কিন্তু এই প্রথম এত উঁচু মাপের কোনো তালেবান নেতা চীন সফরে গেলেন।
তালেবান নেতার এই সফরের চারদিন আগে আফগান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমন্ত্রণ করেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশীকে। চেংডু শহরে দুই মন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয় যে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চীন ও পাকিস্তান যৌথভাবে কাজ করবে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, আফগানিস্তানে যেকোনো অস্থিতিশীলতার প্রভাব প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানে সরাসরি গিয়ে পড়বে। ফলে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আফগানিস্তানে নতুন করে কোনো গৃহযুদ্ধ যাতে শুরু না হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে এবং আফগান বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মীমাংসা আলোচনায় সাহায্যের জন্য পাঁচ-দফা একটি কর্মপরিকল্পনা চেংডুর ওই বৈঠক থেকে ঘোষণা হয়।
আগস্টের মধ্যেই মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণার পর আফগানিস্তান নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো অনিশ্চয়তা-উদ্বেগে ভুগছে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে সবাই এখন সচেষ্ট।
চীন সরকারের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত গ্লোবাল টাইমস সংবাদপত্র বলছে, তিয়ানজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তালেবান নেতা মোল্লাহ বারাদারের সঙ্গে বুধবারের বৈঠকে ওয়াং ই তালেবানের কাছে দাবি করেছেন যে এটিম এবং অন্য সব সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং এসব গোষ্ঠী যাতে আফগানিস্তানে ঘাঁটি না গাড়তে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
গ্লোবাল টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, মোল্লাহ বারাদার বৈঠকে চীনের মন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে কাউকে কোনো তৎপরতা তালেবান চালাতে দেবে না।
বারাদার এও বলেছেন আফগানিস্তানে শান্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তারা চীনের কাছ থেকে আরও ভূমিকা আশা করছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালেবানের ওপর চীনের ভরসা কেন? এ বিষয়ে বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান লিখেছেন, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে চীন আফগানিস্তানে জাতীয় আপোষ-মীমাংসার সমর্থন করছে, কিন্তু তারা আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ শাসক হিসেবে তালেবানকে বিবেচনা করতে শুরু করেছে।
এরপর আফগানিস্তানের ভাগ্যে কি আছে, তা দেখার অপেক্ষায় পুরো বিশ্ব।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০,২০২১
এসআইএস