ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বানের পানি ঠেলে সন্তানকে নিয়ে পোলিও টিকাকেন্দ্রে বাবা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
বানের পানি ঠেলে সন্তানকে নিয়ে পোলিও টিকাকেন্দ্রে বাবা!

বাড়ির চারপাশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যেই সন্তানকে পোলিও টিকা খাওয়ানোর খবর পান নিজামুদ্দিন মোল্লা নামের এক বাবা।

তাই শিশুকে বড় পাতিলে করে পানিতে ভাসিয়ে পোলিও টিকা খাওয়াতে নিয়ে আসেন। এক স্বাস্থ্যকর্মী পানিতেই তার শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ান।  

রোববার (২৬) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সিংহেশ্বর গ্রামে এমন চিত্র দেখা যায়।  

নিজামুদ্দিন মোল্লার দ্বিতীয় সন্তানের বয়স ১৫ দিন। সেই শিশুকে অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে শুইয়ে পানিতে ভাসিয়ে পোলিও টিকা খাওয়াতে নিয়ে যান তিনি। সঙ্গে আরেকজন কাঁধে করে নিয়ে আসেন তার আড়াই বছরের ছেলে শামীমকে।  

ক্যানিং-২ নম্বর ব্লকের সারেঙ্গাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিংহেশ্বর সাবসেন্টার এলাকায় পানিতে দাঁড়িয়েই শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ান স্বাস্থ্যকর্মী সোনালি প্রধান ও নমিতা হালদার।  

স্বাস্থ্যকর্মী সোনালি প্রধান বলেন, ‘আমরা প্রায় হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে হাঁক দিলাম। কারণ তারপরে জল এত বেশি যে, পোলিও বাক্স নিয়ে যাওয়া মুশকিল। ’ 

তিনি আরও বলেন, আচমকাই তারা দেখেন, পানিতে ভাসানো একটি পাতিলে ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন নিজামুদ্দিন। পেছনে অন্য একজনের কাঁধে তার বড় ছেলে।  

সোনালি প্রধান বলেন, ‘প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। পরে বুঝলাম, পাতিলে করে শিশুকে নিয়ে আসছে। ’ 

স্বাস্থ্যকর্মী নমিতা হালদার জানান, শিশুকে এভাবে আনতে দেখে তারাও মূল রাস্তা থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে যান। নিজামুদ্দিনের কাছে জানতে চান, ‘পাতিলে করে কেন শিশুকে নিয়ে এসেছেন?’ 

নিজামুদ্দিন স্বাস্থ্যকর্মীদের জানান, তার স্ত্রীর পানি ঠেলে আসার ক্ষমতা নেই। আবার তিনি নিজেও ১৫ দিন বয়সের ছেলেকে কোলে নিয়ে পানি ঠেলে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন। কোনোভাবে শিশু যদি পড়ে যায়! তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের ডাক শুনেই বাড়িতে থাকা বড় মুখের পাতিলে ছেলেকে কাঁথায় মুড়িয়ে শুইয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন তিনি।  

ক্যানিং-২ নম্বর ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম এখন পানিবন্দি। এর মধ্যেই রোববার ১৭৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী মোট ১২ হাজার ৬১২ জন শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ান।  

একই অবস্থা ক্যানিং-১ নম্বর ব্লকেও। সেখানকার নবপল্লি এলাকায় রোববার বাঁশের তৈরি ভেলায় চেপে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পোলিও টিকা খাওয়াতে দেখা গেছে স্বাস্থ্যকর্মী ফাল্গুনী মণ্ডলকে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অজয় চক্রবর্তী আনন্দবাজারকে জানান, সাধারণত মায়েরাই শিশুদের পোলিও টিকা খাওয়াতে নিয়ে আসেন। সেখানে একজন বাবা দুর্যোগের মধ্যে এভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এটা খুবই প্রশংসার।  

তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ঠেলে, কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে পোলিও টিকা খাওয়ানোর কাজ করছেন, তাতে কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। তাদের জন্য গোটা স্বাস্থ্য দপ্তর গর্বিত। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।