আফগানিস্তানের ব্যাংকিং খাত গভীর সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন কর্মকর্তা। শুধু অর্থ তোলা ছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংকে অন্যান্য সেবা বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
কাবুলে বিশৃঙ্খলার পর ইসলামিক ব্যাংক অব আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মুসা কালিম আল-ফালাহি সাময়িকভাবে দুবাই চলে যান। এখনও তিনি সেখানে অবস্থান করছেন।
দুবাই থেকেই সৈয়দ মুসা কালিম বিবিসিকে বলেন, গ্রাহকরা আতঙ্কিত হওয়ায় দেশটির আর্থিক এই খাত এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আফগানিস্তানের অধিকাংশ ব্যাংকে এখন পুরো সেবা দেওয়া হচ্ছে না। শুধু অর্থ উত্তোলন করা যাচ্ছে।
আগস্টে কাবুল পতনের পর পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তালেবানের কাছে। সম্প্রতি তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ঘোষণা করেছে।
তালেবানের কাছে নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার আগে থেকেই আফগানিস্তানের অর্থনীতি নড়বড়ে অবস্থায় ছিল। অর্থনৈতিকভাবে দেশটি বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বব্যাংকের মতে, আফগানিস্তানের মোট জিডিপির ৪০ শতাংশ আসে বিদেশি সহায়তা থেকে।
কিন্তু তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে পশ্চিমারা আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
সৈয়দ মুসা কালিম বলেন, এখন আর্থিক সহায়তার জন্য তালেবানকে অন্য উৎস খুঁজতে হচ্ছে। চীন, রাশিয়ারসহ অন্য দেশগুলোর দিকে তারা তাকিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে দ্রুতই তারা সফল হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
চীন ইতোমধ্যেই আফগানিস্তান পুনর্গঠন এবং তালেবানের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে।
চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের সাম্প্রতিক একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান পুনর্গঠনে সহযোগিতার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীন অবশ্যই আগ্রহী।
চীন ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে খাদ্য সরবরাহ এবং করোনা ভাইরাসের টিকাসহ ৩১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরপরও তালেবান এখন আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য চাপের মধ্যে রয়েছে। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে, অনেকে চাকরি হারিয়ে অর্থের অভাবে পড়েছেনে।
ডব্লিউএইচও সতর্ক করে দিয়েছে, এখন আফগানিস্তানের মাত্র পাঁচ শতাংশ পরিবারের কাছে প্রতিদিনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাবার রয়েছে।
এক জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেক বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে তাদের অন্তত একবার খাদ্য শেষে হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক তহবিল এবং বিদেশি সহায়তার দিকেই এখন তাকিয়ে থাকছে হচ্ছে আফগানদের।
তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ তালেবানের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা ও চাকরিসহ সব স্থানে নারীদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি সদয় হওয়ার বিষটি সবার উপরে রয়েছে।
সৈয়দ মুসা কালিম আল-ফালাহি জোর দিয়ে বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য নারীদের কাজ করার বিষয়ে তালেবান অনুমতি না দিলেও ব্যাংকিং সেবা সংশ্লিষ্ট কাজে ফিরতে শুরু করেছেন নারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
জেএইচটি