ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিবিসির প্রতিবেদন

ইউক্রেনে যা করছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
ইউক্রেনে যা করছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ইউক্রেনের ওডেসায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মেহেদি হাসান রিজভী। যুদ্ধের আগের ছবি

পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের ওডেসার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিয়ে গত ছয় বছর ধরে পড়াশোনা করছিলেন মেহেদি হাসান রিজভী। আগামী একমাসের মধ্যেই তার ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

তবে তার আগেই দেশটিতে শুরু হয়ে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান। এরপর প্রায় ৪০ কিলোমিটার হেঁটে পোল্যান্ডে গিয়ে আশ্রয় নেন মেহেদি।

তিনি এখন জানেন না, কবে এতদিনের পড়াশোনার ফলাফল দেখতে পাবেন। কবে একজন চিকিৎসক হিসাবে বের হতে পারবেন।

পোল্যান্ডের ওয়ারশ থেকে মেহেদি বলেন, আমি এমন একটা অবস্থায় পড়েছি, ক্রেডিট ট্রান্সফার করে অন্য কোথাও ভর্তি হতেও পারবো না। তবে আমাদের ইউনিভার্সিটি বলেছে, পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা নেবে। না হলে ডিগ্রি দিয়ে দেবে। আমি এখন সেজন্য অপেক্ষা করছি।

এদিকে মেহেদির মতো শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এখন ইউক্রেন থেকে পালিয়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। মেহেদি পড়াশোনার শেষ পর্যায়ে থাকলেও অনেকে রয়েছেন আরো বিপদে। এদেরই একজন শেখ খালিদ বিন সেলিম। ওডেসার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিয়ে চার বছর ধরে পড়েছেন। তার পুরো কোর্স শেষ হতে আরো দুই বছর লাগার কথা। তবে যুদ্ধের কারণে মাঝপথে সেই পড়াশোনা শেষ করে তাকে এখন পোল্যান্ডে অন্য বিষয়ে ভর্তি হতে হয়েছে।

তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে কবে ইউনিভার্সিটি খুলবে, কবে আবার সেখানে পড়ার সুযোগ পাবো, জানি না। এত তাড়াতাড়ি ক্রেডিট ট্রান্সফার করে আনাও সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে পোল্যান্ডে লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টের ওপর ভর্তি হয়েছি।

যদিও পোল্যান্ডে পড়াশোনার খরচ ইউক্রেনের দ্বিগুণ। তবে যুদ্ধ শেষ হলে আবার ইউনিভার্সিটি খুললে তিনি পুনরায় এমবিবিএস পড়াশোনা শুরু করবেন। না হলে চালিয়ে যাবেন পোল্যান্ডের কোর্সের পড়াশোনা।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেন ছাড়ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের হিসাবে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর আগে দেশটিতে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি ছিলেন। তাদের বড় একটি অংশই শিক্ষার্থী, যারা টিউশন ফি কম হওয়ার কারণে চিকিৎসা বা প্রকৌশলের মতো বিষয় নিয়ে পড়তে ইউক্রেনকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এসব শিক্ষার্থীদের এখন বিকল্প খুঁজতে হচ্ছে।

ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের সহায়তা করেছেন একজন স্বেচ্ছাসেবী পার্থ প্রতিম মজুমদার।

তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়তে বছরে শুরুতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার ডলার টিউশন ফি দিতে হয়। তবে পরবর্তীতে এই ফি কিছুটা বাড়ে। কিন্তু পোল্যান্ডে এই খরচ দ্বিগুণের বেশি।

বাংলাদেশ দূতাবাসের চেষ্টায় যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে আসা বাংলাদেশির জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ দিনের ভিসা বরাদ্দ দিয়েছিল পোল্যান্ড সরকার। এর মধ্যেই তাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়া বা অন্য কোনো বৈধ ভিসার আবেদন করতে হবে।

ইউক্রেনের বাংলাদেশি কমিউনিটি চেষ্টা করছে, যেসব শিক্ষার্থীরা এখনই বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারবেন না অথবা কোনো কোর্সে ভর্তি হতেও পারেননি, তাদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট জোগাড় করার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের মাধ্যমে আপাতত তাদের বৈধভাবে থাকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশি কমিউনিটি।

মাত্র ছয় মাস আগে বাংলাদেশ থেকে ওডেসায় বিবিএ কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন তাহজিব আহমেদ। কিন্তু যুদ্ধের কারণে তাকে এখন আশ্রয় নিতে হয়েছে পোল্যান্ডে। প্রথম ১৫ দিন বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে হোটেলে থাকলেও এখন দেশের একজন বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি চেষ্টা করছেন, পোল্যান্ডেই কোনো কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু তার সব কাগজপত্র ইউক্রেনে ফেলে আসায় তিনি এখনই সেটা করতে পারছেন না। বাংলাদেশ থেকে সেসব কাগজপত্র আনার চেষ্টা করছেন। তবে পোল্যান্ডে আসা অনেক শিক্ষার্থী ইউরোপের অন্যান্য দেশেও চলে যাচ্ছেন।

সূত্র: বিবিসিবাংলা

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।