ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

‘রমজান ঐতিহ্য’

রমজান মাসে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় সৌদি আরবে

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
রমজান মাসে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় সৌদি আরবে

মুসলিম বিশ্বের তীর্থভূমি সৌদি আরবে রমজানের আমেজ বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ভিন্ন। বায়তুল্লাহ শরিফ ও মসজিদে নববীর উপস্থিতি এবং ইসলামি ঐতিহ্য রমজানে অপূর্ব আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় আবহের সৃষ্টি করে সেখানে।

পূর্ব থেকেই রমজানের জন্য প্রস্তুত থাকেন সৌদি আরবের মুসলিম অধিবাসীরা। রমজানের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের হিল্লোল বয়ে সমাজের সকল স্তরে। হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন বরকতি দোয়া ও বাক্যে পরস্পরকে অভিনন্দন জানায় তারা। যেমন- রমজান মোবারক হোক, রমজানের কল্যাণ বছরভর অব্যাহত থাকুক, আল্লাহ আমাদেরকে রমজানের সিয়াম ও কিয়াম পালনে সাহায্য করুন- ইত্যাদি।

সৌদিয়ানরা পানি, খেজুর ও ভেজা খাবার দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করে। ইফতারের ক্ষেত্রে তাদের কিছু পারিবারিক ঐতিহ্যও রয়েছে। যেমন, পরিবার প্রধান বা পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য প্রথম ইফতার করেন এবং তিনি অন্যদের হাতে ইফতার তুলে দেন।
 
ইফতারির জন্য তারা খুব বেশি সময় ব্যয় করে না। মুয়াজ্জিন নামাজের জামাতের ইকামত দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা খাবার ছেড়ে নামাজের জামাতে শরিক হয়। নামাজ শেষে তারা ইফতারের মূল পর্ব শুরু করে। এ পর্বের জনপ্রিয় খাবার হলো, ঘি বা জলপাইয়ের তেলে ভাজা সবজি। সবজির আয়োজনে থাকে, শিম, মটরশুটি, বাদাম, পুডিং, জেলি এবং কয়লায় রান্না করা বিশেষ ঘি ও শিম তরকারি। এছাড়াও কাবাব-রুটি ইফতার আয়োজনে সৌদিয়ানদের কাছে বিশেষভাবে প্রিয়। খাবারের পর তারা রঙ চা পান করে এবং প্রতিবেশিদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কুশল বিনিময় করে, পরস্পরের খোঁজ-খবর নেয়। বিশেষত কারো ঘরে অতিথি থাকলে তিনি তাকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

এরপর এশার আজান হলে নারী-পুরুষ সবাই তারাবির নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়। সৌদি আরবের প্রায় প্রতিটি মসজিদেই নারীদের জন্য ভিন্ন নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। বায়তুল্লাহ শরিফ ও মসজিদে নববীসহ অধিকাংশ মসজিদে বিশ রাকাত তারাবি পড়া হয়। তারাবির পর মসজিদে মসজিদে ধর্মীয় আলোচনা হয়। আলোচনায় ইমাম সাহেব বা স্থানীয় আলেমরা বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করে করে থাকেন। আলোচনা মজলিসের পর তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা হয়। তাহাজ্জুদের নামাজ অব্যাহত থাকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত। প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজে ১০ পারা কোরআন তেলাওয়াত করা হয়।

রমজানে সৌদিয়ানদের মাঝে পূণ্যের কাজে বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দিপনা দেখা যায়। বিশেষভাবে দু’হাত খুলে তারা দান-সদকা করে। অসহায় ও দরিদ্র্যদের মাঝে ইফতার সামগ্রি ও সেহরির খাবার বিতরণ করে। ইফতারের সময় পানি ও পানীয় বিতরণকে তারা অত্যন্ত পূণ্যের কাজ মনে করেন। ২৭ রোজার পর থেকে ঈদের দিনের মধ্যেই সকলে তাদের জাকাত ও সদকাসমূহ আদায় করে দেয়। এছাড়াও প্রত্যেক এলাকায় একাধিক স্থানে উম্মুক্ত ইফতারের আয়োজন করা হয়। সেখানে পথিক, প্রবাসী ও শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করে থাকে। কারখানাগুলোতেও শ্রমিকদের জন্য উন্নতমানের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। রমজান উপলক্ষ্যে সরকারিভাবেই কর্মঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা কমিয়ে দেয়া হয়। রোজার সময় হিসেবে কখনো কখনো এক ঘণ্টার বেশি সময়ও দেয়া হয়।

রমজানের অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পর তারা ওমরা আদায়ে মনোযোগী হয় এবং রমজানের শেষ দশকে হারামাইন শরিফে ইতিকাফের জন্য একত্রিত হতে থাকে। এভাবেই পূণ্য ও ভালো কাজের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে রমজানের সিয়াম পালন করেন সৌদি আরবের অধিবাসীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘন্টা, জুন ১৮, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।