ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

করুণা নয়, দরকার নারীর স্বীকৃত ও প্রাপ্য অধিকার

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
করুণা নয়, দরকার নারীর স্বীকৃত ও প্রাপ্য অধিকার

আজ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯৫ সালের এ দিনে দিনাজপুরে কতিপয় বিপথগামী পুলিশ সদস্যের হাতে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন দুর্ভাগা তরুণী ইয়াসমিন।

ইয়াসমিন ট্র্যাজেডির আজ ২০তম বার্ষিকী। দিনটি দেশব্যাপী পালিত হয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে।

বস্তুত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি সম্মান, মর্যাদা ও নারীর প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করা হয়।

ইসলাম নারী উন্নয়নের বিরোধী নয়। ইসলাম নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখার পক্ষেও নয়। বরং নারীর নানাবিধ অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগে, নারীর যখন কোনো অধিকার ছিল না, ইসলাম সে সময়ই নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেছে।  
ইসলামি অনুশাসনে নারীর আলাদা সত্তা, যেমন পুরুষ। তার জন্ম-মৃত্যু, অস্তিত্ব, দুনিয়া ও আখেরাতের হিসাব-নিকাশ এবং ইসলামি অনুশাসনের সব নিয়ম সমানভাবে প্রযোজ্য। আর এটা নারীর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে স্বামী বেছে নেওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। নিজস্ব সম্পত্তি রাখা থেকে হস্তান্তর ও ভোগ পর্যন্ত প্রলম্বিত। শুধু আচরণ বিধিটি শরিয়তসম্মত হওয়া জরুরি। শরিয়ত নারী-পুরুষের জন্য পৃথক নয়। ক্ষেত্র এবং দায়গত পার্থক্য ছাড়া মানবিক সত্তায় নারী-পুরুষের পার্থক্য ইসলাম স্বীকার করে না।

ইসলামে স্বীকৃত নারীর অধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে, জন্মগতভাবে নারী-পুরুষ অভিন্ন এবং একই মর্যাদাসম্পন্ন মানবসত্তা। নর-নারীর শাস্তি এবং পুরস্কার আল্লাহর কাছে একই পাল্লায় বিবেচ্য। উভয়ের জন্য শিক্ষা ফরজ, জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্যের সুযোগ নেই। নর-নারী উভয়ই মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে স্বাধীন। নারীর অভিমত নেওয়ার ক্ষেত্রে নারী বলে কোনো ধরনের পূর্বধারণা লালন করা যায় না। নাগরিক ও সামাজিক কাজে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে পূর্ণ এবং শর্তহীন জীবনধারার নিশ্চয়তা রয়েছে।

নারীর নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকারও রয়েছে। একই ধরনের শ্রম ও কাজের জন্য একই মানের বেতন-ভাতা পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। নিজস্ব সম্পত্তির মালিকানার পূর্ণ এখতিয়ার রয়েছে। স্বামী হিসেবে কাউকে মেনে নেওয়ায় নারী স্বাধীন এবং অভিমত তার দিক থেকে চূড়ান্ত বিবেচিত হবে। স্বামীর কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার নিশ্চয়তার আগে বাবার কাছ থেকে, কিংবা বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সেই নিশ্চয়তা পাবে। এ ধরনের পারিবারিক নিশ্চয়তা না থাকলে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব বহন করবে।

দেখুন, ইসলাম নারীকে কতটা স্বাধীনতা দিয়েছে, বিয়ের পর স্বামীর নামের লেজুড়বৃত্তি কোনো ইসলামি বিধান নয় বরং নারী সবসময় স্বনামেই পরিচিত হওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা রাখে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীরা রাসূলের স্ত্রী থাকা অবস্থাতেও নামের শেষে নিজ বংশীয় উপাধি ব্যবহার করতেন। যেমন হজরত আয়েশা সিদ্দীক (রা.), হজরত খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ। যদি এটা ইসলামি বিধান হতো, তবে তারা অবশ্য অবশ্যই তাদের নামের শেষে নবী করিম (সা.)-এর নাম মুহাম্মদ যোগ করত।

ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা দিয়েছে বলেই সে, কার্যকারণ থাকলে স্ব-উদ্যোগে তালাক চাওয়া, দেওয়ার অধিকার পূর্ণভাবে পাবে। সন্তানের দায় পিতা বহন করতে বাধ্য, এমনকি বিয়ে বিচ্ছেদের পরও। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার পূর্ণ নিশ্চয়তা রয়েছে। একজন পুরুষ উত্তরাধিকার আইনে বাবা-মায়ের দিক থেকে অর্থসম্পদ পেতে পারেন, কিন্তু একজন নারী বাবা-মায়ের দিক থেকে এবং স্বামী উভয় দিক থেকে উত্তরাধিকার বিধিসম্মত অর্থসম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারেন।

এগুলো কোনো করুণা কিংবা দয়া নয়, নারীর স্বীকৃত ও প্রাপ্য অধিকার। নারীকে দেনমোহর পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলেও নারী স্বামীর কাছ থেকে প্রতিশ্রুত দেনমোহরের পূর্ণ হকদার। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দেনমোহরকে বিয়ের শর্ত এবং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে প্রদত্ত অর্থসম্পদে স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত করে উম্মতের জন্য বিধান দিয়েছেন। এর অর্থ ইসলামে পণ ও যৌতুক নামের কোনো অত্যাচার বা প্রথার সুযোগ নেই।

এভাবে ইসলাম নারীকে যেসব মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে তা এক কথায় নজিরবিহীন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের নারীরা এগুলো জানে না। এ জন্য প্রয়োজন আমাদের নারীদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

ইসলাম নারীকে কখনও পণ্য মনে করে না। বরং এমন মনোভাবকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। তেমনি ইসলাম নারীকে কোথাও খাটো ও অমর্যাদা করেনি। ইসলামে নারীর যেসব অধিকার রয়েছে, যা সর্বাগ্রে তাদেরই জানা উচিত। ইসলামে নির্দেশিত নারীর মৌলিক অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দেওয়া উচিত, পালন করা উচিত।

আজ পৃথিবীজুড়ে যেভাবে নারী নির্যাতনের হার বাড়ছে, নারীকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। নারীর প্রতি সম্মানবোধ না থাকার কারণেই এমনটি হচ্ছে। আমরা আশা করি, এবারের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের প্রত্যয় হবে, নারী নির্যাতন বন্ধ করার প্রত্যয়। কোনো করুণা নয়, কোনো দয়া নয়- নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার ও সম্মান প্রদানের প্রত্যয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘন্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।