ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ন্যায় কাজের আদেশ দিলে বর্ষিত হয় আল্লাহর রহমত

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৬
ন্যায় কাজের আদেশ দিলে বর্ষিত হয় আল্লাহর রহমত

পবিত্র কোরআন হচ্ছে সব সময়ের জন্য কল্যাণের উৎস। কোরআনে কারিম মেনে চলার মাধ্যমে অর্জিত হয় অশেষ কল্যাণ।

পবিত্র এ গ্রন্থটি শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিল হয়েছে। কোরআন শরিফ কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের যাবতীয় কল্যাণের উৎস। যারা চাইবে তারাই কোরআন থেকে সুফল লাভ করতে পারবে।

আমরা জানি, সত্য-মিথ্যা এবং ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা বেশ কঠিন কাজ। কারণ একদিকে সত্য-মিথ্যা তথা ন্যায়-অন্যায়কে নির্ণয়ের বিষয়ে মানুষের তথ্য-জ্ঞান সীমাবদ্ধ ও অপরিপূর্ণ। অন্যদিকে নানা ধরণের চাহিদা ও লোভ-লালসা মানুষকে অন্যায় পথে পরিচালিত করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে।

কিন্তু পবিত্র কোরআন সর্বজ্ঞানী আল্লাহর দেওয়া গ্রন্থ। তিনি নিজের অসীম জ্ঞানের আলোকে কোরআন নাজিল করেছেন। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে মানুষের জীবনের নানা পর্যায়ের ন্যায়-অন্যায়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন এবং ন্যায়-অন্যায়কে চিনে ন্যায়ের পথে চলার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও কোরআনের ভিত্তিতে মানুষকে সৎপথ থেকে দূরে সরে না যেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সৎপথ পরিহারের পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সতর্কবাণী শুধুমাত্র রাসূলের যুগের মানুষের জন্য নয় বরং সব যুগের সব মানুষের জন্যই প্রযোজ্য।

পবিত্র এই কোরআনের একটি সূরার নাম- সূরা আল ফোরকান। ৭৭ আয়াত বিশিষ্ট সূরাটি মক্কায় নাজিল হয়। ফোরকান শব্দের অর্থ হচ্ছে, সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য নির্ণয়কারী।


এ সূরার ১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘অশেষ মঙ্গলময় তিনি, যিনি তার বান্দার জন্য কোরআন অবতীর্ণ করেছেন; যাতে তা সমস্ত সৃষ্টির জন্য সতর্ককারী হতে পারে। ’

উল্লিখিত আয়াতের কিছু শিক্ষণীয় বিষয় হলো-

ক. পবিত্র কোরআন আল্লাহ প্রদত্ত গ্রন্থ এবং তা মানুষের সব ধরনের কল্যাণের উৎস হিসেবে নাজিল হয়েছে।

খ. বিভিন্ন বিষয়ে ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য-মিথ্যা চেনার সর্বোত্তম মাধ্যম এই কোরআন।

গ. হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকনির্দেশনা কোনো নির্দিষ্ট গোত্র বা জাতির জন্য নির্ধারিত নয় বরং গোটা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য।

আর যারা এভাবে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের অনুসরণ করবে; তারাই হলো প্রকৃত মুমিন। পবিত্র কোরআনে মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘মুমিন আমানতদার, সত্যবাদী, পরোপকারী, হালাল রুজি উপার্জনকারী ও পরিশ্রমকারী ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবেন। সুতরাং যার মধ্যে ইসলামের সব বৈশিষ্ট্য থাকবে- কেবল সেই প্রকৃত মুসলমান হিসেবে বিবেচিত হবে।

ইসলামের আরেকটি বড় নির্দেশ হচ্ছে, ন্যায় কাজের আদেশ এবং সব ধরনের অন্যায় কাজের নিষেধ। এ সম্পর্কে কোরআনের সূরা আল ইমরানে ১০৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং ন্যায় সঙ্গত কর্মের আদেশ করবে ও অসঙ্গত কর্মে বাধা প্রদান করবে; আর এরাই সফলকাম হবে। ’

আয়াতের তাফসিরে আলেমরা বলেছেন, সমাজে এমন কিছু লোক থাকা দরকার; যারা সমাজের কোথাও খারাপ কাজ হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখবে এবং তাতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। এ আয়াতের শিক্ষা হলো, প্রকৃত মুমিনকে শুধু নিজের মুক্তির কথা চিন্তা করলে হবে না,সমাজের অন্যান্য সদস্যদের মুক্তি ও তাদের উন্নতির জন্যেও চেষ্টা করতে হবে। এটা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার বর্হিপ্রকাশ। এর ওপর সমাজের কল্যাণ ও সৌভাগ্য নির্ভরশীল। তবে সমাজ থেকে দূরে থাকলে বা সমাজকে এড়িয়ে চললে কিংবা সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে চুপচাপ ঘরের এক কোণে বসে থাকলে এ কল্যাণ ও সৌভাগ্য অর্জিত হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।