ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

পবিত্র হজ হোক সেলফিমুক্ত

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৬
পবিত্র হজ হোক সেলফিমুক্ত ছবি: সংগৃহীত

হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। হজ একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য মানুষ পালন করে থাকেন।

সন্তুষ্টি অর্জনের এ ব্যাকুলতাই হচ্ছে- হজের প্রাণ। প্রদর্শনের ইচ্ছা যে কোনো ইবাদতের মেজাজ ও চেতার সম্পূর্ণ বিপরীত। ইবাদত প্রদর্শনের আগ্রহকে হাদিসে ‘রিয়া’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রিয়াকে বলা হয়- গোপন শিরিক। হজের সময় উঠানো সেলফি হলো- সেই গোপন শিরিকেরই এক নগ্ন প্রকাশ।

ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে বুঝা যায়- হজের মতো আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ একটি ইবাদত কি পরিমাণ সেলফিমুখি হয়েছে। এটা ভাবতেও অবাক লাগে।

হাজার হাজার মাইল দূর থেকে ছুটে এসে একজন মুমিন যখন কালো কাবার আলোকিত চত্বরে হাজির হয়; তখন তো তার মনের সব আবেগ, উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা, ভালোলাগা কাবাকে নিয়ে হওয়ার কথা। কাবার দর্শনে আবেগাপ্লুত হয়ে নিজের অস্তিত্বকেই ভুলে যাওয়ার কথা। কাবার দিকে উদাস মনে তাকিয়ে থাকাও তো ইবাদত। কিন্তু সেলফি রোগে আক্রান্তদের মনের সেই অনুভূতি যেন মোবাইলের ফ্ল্যাশে জ্বলে ছাই হয়ে গেছে। কাবা দেখার চেয়ে ফেসবুকে নিজের ছবি আপলোড দিতেই তাদের বেশি আগ্রহ। কাবাসহ সেলফি ধারণ করতে গিয়ে পবিত্র কাবার দিকে পেছন দিয়ে দাঁড়াতেও তাদের মন কুণ্ঠিত হয় না। পবিত্র কাবাকে পেছনে রেখে সেলফিসমৃদ্ধ ছবিগুলো দেখলে কাবাপ্রেমিকদের মনে বড় ব্যাথা লাগে। কাবাকে পেছনে রেখে একজন মুমিন কিভাবে হাসিমুখে দাঁড়ায়!

পবিত্র কাবার সামনে দাঁড়িয়ে কাবার প্রভুর আরাধনায় নিজেকে বিলীন না করে উল্টো নিজেকে স্থির ধরে রাখার ঔদ্ধত্য কাবামুখি একজন মুমিনের কিভাবে হয়- তা ভাবতেও গা শিহরিত হয়। শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়।

সাফা-মারওয়ার পাহাড়ে, আরাফার মাঠে, মুজদালিফাতে যেখানে দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য দোয়া করতে করতে একজন মুমিনের বেহুঁশ হয়ে যাওয়ার কথা- সেখানে কিভাবে একজন মুমিন ইহরামের কাপড় গায়ে জড়িয়ে সেলফি উঠায়! এসব জায়গায় সেলফি তোলা তো দূরের কথা; মোবাইল সেটের কথাই তো মনে থাকার কথা না। তবে কি, দয়াময় প্রভুর কাছে আর্জি পেশ করার চেয়ে দুনিয়ার মানুষের কাছে সেলফি প্রকাশ করার স্বাদ ও প্রয়োজন বেশি!

প্রচারসর্বস্ব সেলফি হাজিদের মোবাইলের ফ্ল্যাশের অত্যাচারে প্রচারবিমূখ সত্যিকারের ইবাদতগুজার হাজিরা ধ্যানমগ্নতার সঙ্গে ইবাদত করতে পারে না। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি, মসজিদে কুবা কোথাও বসে একমনে কিংবা নিরবে ইবাদত করার উপায় নেই। একটু পর পর ক্লিকের শব্দ আর উজ্জ্বল আলোর ঝলক দোয়া, জিকির ও কোরআন তেলাওয়াতের বিঘ্ন ঘটায়; মনোযোগ নষ্ট করে। ইবাদতের স্থানে যারা সেলফি তুলছে তারা নিজেরাও ঠিকমতো ইবাদত করে না, ইবাদতে আগ্রহী অন্যদেরও মনোযোগ ইবাদত করতে ব্যাঘাত ঘটায়। এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

যে সব স্থান ও স্থাপনা ইবাদতের স্থান, ইসলামের মর্যাদার প্রতীক হজের সফরে সে সব স্থানে সেলফি উঠানোর দ্বারা একদিকে পবিত্র স্থানসমূহের অবমাননা করা হয়, দ্বিতীয়ত রিয়ার বিষাক্ত ছোবলে হজ হয় প্রভাবহীন। এমন হজ মানব জীবনে কোনো কাজে আসে না। তাই আমাদের নিরন্তর প্রত্যাশা হলো- হজ হোক সেলফিমুক্ত। হজ হোক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৬
এমএইউ/
আরও পড়ুন>>
** হে আল্লাহ! পবিত্র হজের জন্য আমাদের কবুল করো
** এবার হজ পালনে যাচ্ছেন রেকর্ডসংখ্যক ১ লাখ ৫৬ হাজার ভারতীয়
** মদিনা শরিফে আল্লাহর নাম সংবলিত প্রদর্শনীতে হাজীদের ভিড়
**
প্রাচীন ও বৃহৎ কোরআনের প্রদর্শনী চলছে মসজিদে নববীর আঙিনায়
** প্রতিদিন ১২০টি রহমত বর্ষিত হয় পবিত্র কাবাঘরে
** নবীর কদম মোবারকের স্পর্শে ধন্য মদিনার মাটিতে রয়েছে অজস্র বরকত
‍** হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি
** সাম্যবাদের কথাকে মনে করিয়ে দেয় হজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।