তার এ ভ্যানকে ঘিরেই সাহায্যের জন্য কবরস্থানে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কাছে নানা হাঁকডাকে হাত পাতছেন হাসান (২৭) ও ইউনুস আলী (৫৫)।
‘আমার রোগীর গলায় ক্যানসার।
হাসান ও ইউনুস মুসলমানদের ভাগ্য রজনীর রাত বলে বিবেচিত পবিত্র লায়লাতুল বরাতে ভিক্ষুকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।
আদতে তারা রিকশাচালক। নগরীর মোড়ে মোড়ে রিকশার প্যাডেলে পা রেখে ভাড়া মারেন। কিন্তু এদিন ভাড়ার চেয়ে ভিক্ষা লাভজনক হওয়ায় রাস্তায় নেমেছেন।
ফজরের নামাজ অবধি এ গোরস্থানের চৌহদ্দিতে দাঁড়িয়ে বয়োবৃদ্ধ হেলালের উপার্জনের অর্ধেক টাকাই নিয়ে নেবেন তারা।
হাসান, ইউনুস মিয়াদের সঙ্গে আরেকজন ছিলেন। কিন্তু ক্যামেরার ফ্ল্যাশ দিতেই ওই যুবক পাততাড়ি গুটিয়ে নিলেন।
কাছে এগুতেই চটুল ঢঙে হাসান বললেন, ‘আরেকজনের উপকার করলাম। এইজন্যই একদিনের ভিক্ষায় নামছি। এতে নিজেরও কিছু আয় হবে। ’
কোন মুসল্লিকে দেখলেই যেন গলার স্বর চড়া হচ্ছে তার। ঘটনা কী, গালভরা হাসিতে হাসানের জবাব, ‘বেশি কুদলে (জোরে ডাকলে) বেশি টেহা (টাকা)। ’
ভিক্ষা বাণিজ্যের এ চিত্রটি শুধু যে নগরীর গুলকিবাড়ী গোরস্থানের তা কিন্তু নয়। একই চিত্র নগরীর বড় মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ, কালিবাড়ি, আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টারসহ নগরীর সবক’টি গোরস্থান এলাকাতেই।
এসব স্থানে বৃহস্পতিবার (১১ মে) সন্ধ্যার পর থেকেই ভিক্ষুকের সারি।
নগরীর বড় মসজিদের সামনেই ভিক্ষুকের সারিতে বসে থাকা ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ি এলাকার হোসেন আলী (৪৫) জানান, বছরের অন্যান্য সময় মানুষ ভিক্ষা দিতে চায় না।
‘এ কারণেই শবে বরাতের রাতের জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। আজ ব্যবসা ভালোই হবে। ’
দেখা গেলো, মসজিদ বা গোরস্থানের আশেপাশে পঙ্গপালের মতো ভিড় করা ভিক্ষুকদের কারো নেই হাত-পা, কেউ অন্ধ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত।
তারা নিজেদের অসহায়ত্ব দেখিয়ে ভিক্ষা বাণিজ্যে নেমেছে। তাদের আবার নিয়ন্ত্রণ করছে পেশাদার ভিক্ষুকদের সিন্ডিকেট।
মুক্তাগাছা উপজেলা থেকে আসা যুবক বয়সী ভিক্ষুক ফজলু মিয়া জানালেন, গ্রামে ধান ডুবে গেছে। সেখানে মানুষ ভিক্ষা দেয় না।
‘পবিত্র এ রাতে বাড়তি ইনকাম করতেই শহরে এসেছি। বিত্তবানরা হাতখুলে দান-খয়রাত করবে। রাত শেষে দুই থেকে তিন হাজার টাকা উঠলেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম