সিয়াম সাধনাসহ দান-খয়রাত, কোরআন তেলাওয়াত, তারাবিসহ সব ইবাদতে মুসলমানদের মনোযোগী হতে দেখা যায় বেশি।
পক্ষান্তরে খারাপ কাজ থেকে সরে এসে অনেকে বেশি বেশি ভালো কাজে অংশ নেন।
সামর্থবানরা নিসাবে মাল হলে শতকরা আড়াই ভাগ জাকাত প্রদান করেন এ মাসে। ফিতরা আদায় করেন ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই। অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয় পবিত্র কোরআন নাজিলের মাসটি। এ মাসটি যেমন ইবাদত-বন্দেগির, তেমনই মহান ত্যাগেরও।
কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এ মাসটিকেই অধিক মুনাফা লাভের মাস মনে করে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেন। এ মাসে বেচাকেনা এমনিতেই বেশি হয় বলে মুনাফাও বেশি হবার কথা। অথচ আমাদের দেশের প্রায় সব ব্যবসায়ীই নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে রোজাদারদের কাছ থেকে অধিক লাভ করেন। কিন্তু কেন?
বিশ্বের অনেক দেশে পবিত্র রমজান মাসে জিনিসপত্রের মূল্য কমিয়ে দেওয়া হয়, যাতে সিয়ামপালনকারীর কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারে। এমনকি কোনো কোনো অমুসলিম দেশেও এ মাসে রোজাদারের সম্মানে নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাস করা হয়।
কিন্তু আমাদের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে রমজানে নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপাতির দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। সে রীতি এবারও বেড়েছে।
এবার শবেবরাতের আগেই একদফা পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। চাল, ডাল, চিনি, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, মশলা প্রভৃতির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
আবার রমজান শুরু হলেও আরেকদফা দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চালের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ টাকা। ৪৫ টাকার নিচে বাজারে কোনো চালই পাওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে নিম্ন আয়ের মানুষ সীমাহীন কষ্টে রমজান কাটাবেন- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা সবাই শুধু মুনাফা দেখেন এমন নন। অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আছেন যারা পরহেজগার। তারা একটু উদ্যোগী হলে মনে হয় স্বস্তির সঙ্গে অনেকের রোজাপালন সহজ হয়। অন্ততপক্ষে তারা পবিত্র রমজানে জিনিসপাতি অল্প লাভে বেচে সওয়াব হাসিল করতে পারেন।
সৌদি আরবসহ কোনো কোনো মুসলিম দেশে রমজান মাসে গরিব মানুষের মধ্যে ইফতার সামগ্রী থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় খাবার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। আমাদের দেশের সামর্থবানরাও এমন ঔদার্যের পরিচয় দেখাতে পারেন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, শহরের বস্তিবাসী এবং হাওর অঞ্চলের লোকদের মাঝে।
সরকারি উদ্যোগে ন্যায্যমূল্যে চাল, ডাল, চিনি, তেল বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রতি বছর। কিন্তু অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে এটা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। তাই এটাকে অনেকে নামকাওয়াস্তের উদ্যোগ বলে থাকেন।
আমরা মনে করি, সরকারি উদ্যোগে ন্যায্যমূল্যে চাল, ডাল, চিনি, তেল বিক্রির উদ্যোগ যেন নামকাওয়াস্তের না হয়। মানুষের প্রকৃত উপকার বা সেবা করতে চাইলে মানসিকতাও সেরকম থাকতে হবে। আমরা চাই, রমজানে কারসাজি করে পণ্যের দাম যাতে না বাড়ানো হয়।
সিয়ামসাধনারত ধর্মপ্রাণ মানুষদের কষ্ট যাতে না বাড়ে সেদিকে সরকার, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা কঠোর নজর রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
এমএইউ/