ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শুরু হয়নি যাকাতের কাপড় বিক্রি, দরদামে যাকাতদাররা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
শুরু হয়নি যাকাতের কাপড় বিক্রি, দরদামে যাকাতদাররা ক্রেতাহীন যাকাত কাপড়ের দোকান। ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: গরিব-দু:স্থ ও অসহায় মানুষের জন্য যাকাতের কাপড় বিক্রিতে এখনো সাড়া পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। সমাজের বিত্তশালী ও মধ্যবিত্ত যাকাতদাতারা কাপড় কেনা শুরু না করায় ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি নেই। যাকাতদাররা মূলত দাম যাচাইয়ে ব্যস্ত থাকায় তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

তবে তারা বলছেন, ২৭ রমজানের দুই থেকে তিন দিন আগে অবস্থা সম্পন্নরা বিপণী বিতানমুখী হবেন। মূলত ওই সময়টার অপেক্ষায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

তখন ক্রেতার চাহিদা মেটাতে দম ফেলারও সময় পাবেন না তারা।

শনিবার (১০ জুন) ময়মনসিংহ নগরীর যাকাতের কাপড় ব্যবসায়ীদের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত তেরি বাজার, গাঙ্গিনারপাড় ও স্টেশন রোড এলাকার বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

জানা গেছে, সাধারণত প্রতিবার ১০ রমজানের পর যাকাতের কাপড় বিক্রি শুরু হয়। নগরীর ও বিভিন্ন উপজেলার উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যাকাতের কাপড়ের জন্য এসব দোকানমুখী হন। আসতে থাকে অর্ডার। সময় নিয়ে বাছাই করে গাঁট বেঁধে নিয়ে যান তারা।

যাকাতের বিভিন্ন দামের কাপড় পাইকারি দামে বিক্রির জন্য নগরীর তেরি বাজারে রয়েছে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ টি দোকান। এখান থেকে যাকাতদাররা নিজেদের পছন্দসই শাড়ি ও লুঙ্গি কেনেন।

এখানকার বেশিরভাগ দোকানের সামনেই ‘এখানে যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি হয়’ এমন বোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে।

নগরীর তেরি বাজার এলাকার যাকাতের পাইকারি কাপড়ের অন্যতম বিক্রেতা ময়মনসিংহ ক্লথ স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, যাকাতের কাপড়ের বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি। ক’দিন গেলে এ বাজার হয়তো চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

এখানকার বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানেই যাকাতের শাড়ি হিসেবে পাপিয়া প্রিন্ট শাড়ি, দীপু প্রিন্ট শাড়ি, তমা প্রিন্ট শাড়ি ও জয়া প্রিন্ট শাড়ি রয়েছে।

১২ হাত লম্বা এসব শাড়ি আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ টাকায় বিক্রি হয়। আর সাধারণ মানের লুঙ্গি বিক্রি হয় ৭০ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত।

যাকাতের আলাদা কোন কাপড় নেই, এমন দাবি করে এ দোকানের ম্যানেজার স্বপন পাল বাংলানিউজকে বলেন, গতবারের মতো এবারো যাকাতের কাপড়ের দাম সহনীয় পর্যায়েই রয়েছে।

যাকাতদাররা এখন শুধু দাম যাচাই-বাছাই করছেন। ক’দিন পরই বিক্রি-বাট্টা পুরোদমে শুরু হবে।

২০১৫ সালে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৭ জনের মৃত্যুর পর মূলত যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রিতে ধস নামে বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী।

তাদের ভাষ্যে, বাড়তি ঝক্কি-ঝামেলার আশঙ্কায় অনেকেই যাকাত বাবদ গরিব ও দুস্থ:দের মাঝে নগদ টাকা দান করেন।

আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা তেরি বাজারের পাশাপাশি শহরের গাঙ্গিনারপাড় ও স্টেশন রোড এলাকার বিভিন্ন বস্ত্রালয় থেকে যাকাত কিনতেন।

কিন্তু এবার পবিত্র মাহে রমজানের বিদায় মুহূর্তেও যাকাতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে অনেক কম। প্রতিবারের তুলনায় মাত্র অর্ধেক শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর তেরি বাজার এলাকায় একটি যাকাতের কাপড়ের দোকানে আলাপ হলো সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জ থেকে আসা অবস্থাসম্পন্ন ব্যবসায়ী আবু তাহেরের সঙ্গে।

তিনিও দরদাম করতেই বিপণী-বিতানে এসেছেন। এ ব্যবসায়ী জানান, যাকাতের কাপড়ের দাম বাড়েনি। গতবারের অবস্থাতেই রয়েছে।

একই রকম অবস্থা দেখা গেলো এখানকার মেসার্স আনসার বস্ত্রালয়, হাবিব ক্লথ স্টোর, ফারুক বস্ত্রালয়, দি নিউ বিউটি ক্লথ স্টোর, মেসার্স বি.আর.বি ক্লথ স্টোর, আমিনা ক্লথ স্টোরসহ কয়েকটি দোকানে।

এসব ব্যবসায়ীও বলছেন, ময়মনসিংহে যাকাত ট্র্যাজেডি’র ঘটনার পর আর কেউ ঝুঁকি নিতে চান না। আগে যারা কাপড় কিনতো তারাও এখন ভয় পাচ্ছে, যদি মানুষ বেশি হয়ে যায়, বড় ধরনের কোন ঝামেলার মুখে পড়তে হয়।

মেসার্স আনসার বস্ত্রালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান বলেন, দোকানে মানসম্পন্ন যাকাতের কাপড়ের কোন অভাব নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত দোকানে চাহিদামতো ক্রেতা নেই। গতবারের চেয়ে বিক্রি তাই কম। ’ একই রকম তথ্য জানান জননী বস্ত্রালয়ের কর্মচারী রূপন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এমএএএম/ জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।