পাসপোর্ট, ভিসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ। এ ব্যাপারে আপনার মোয়াল্লিম আপনাকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন।
ছুটি মঞ্জুরসহ বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি পত্র। এটা সবার জন্য জরুরি নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এটা অত্যাবশ্যক। সরকারি কর্মকর্তারা বিভাগীয় নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেবেন। অন্যান্য চাকরিজীবীদের জন্য ছুটির অনুমোদন নেওয়াটা তাদের নিজেদের জন্যই কল্যাণকর।
একটা বড় ব্যাগ। আপনার হজ কাফেলা বাংলাদেশের পতাকা চিহ্নিত ওই ব্যাগ আপনাকে সরবরাহ করবে এবং এ ব্যাগটিই আপনাকে বহন করতে হবে। কাজেই মোয়াল্লেমকে না জানিয়ে বড় কোনো ব্যাগ কিনলে অর্থের অপচয় হবে।
কাঁধে বা হাতে বহনের জন্য ছোট ১টা হালকা চামড়া বা কাপড়ের ব্যাগ। এই ব্যাগটি যাত্রাপথে বিশেষ করে হজের মূল সফরে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ) বিশেষ দরকার হবে যখন আপনার মূল সামনা (বড় ব্যাগ) আপনার কাছ থেকে দূরে থাকবে এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমগ্রী আপনাকেই বহন করতে হবে।
ইহরামের কাপড়
পুরুষদের মোট ৫টা, পরার জন্য ৩টা, গায়ে দেওয়ার জন্য ২টা। যে কোনো অভিজাত বস্ত্র বিতানে এলে আপনি তা কিনতে পারবেন। তাদের সঠিক মাপও জানা আছে। হজের সময় মা-বোনদের স্বাভাবিক কাপড় পরা বৈধ।
অন্যান্য কাপড়
পুরুষরা হজে হালাল অবস্থায় পরার জন্য কমপক্ষে ৩টা পাঞ্জাবি, ২টা পায়জামা, ২টা লুঙ্গি, ২টা গেঞ্জি বা ফতুয়া সঙ্গে নেবেন। মহিলারা সব সময় পরার জন্য কমপক্ষে ৪ সেট সেলোয়ার-কামিজ, স্কার্ফ ও ২টা বোরকা সঙ্গে নেবেন। সবাইকে ১টা তোয়ালে বা গামছা, ১টা চাদর, ১টা কাঁথা, ১টা ছোট বালিশ (তুলার অথবা বাতাসের) নিতে হবে।
মক্কা-মদিনায় কাপড় আয়রণ করা খুব ব্যয়বহুল। তাই সমমনা ৫-৬ জন মিলে ১টা হালকা আয়রণ সঙ্গে নিলে বেশ উপকার হবে। বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে পারেন।
ছোট আয়না, চিরুণি, কাঁচি, রেজার, ব্লেড, সুঁই-সুতা, নাইলনের দড়ি ও প্লাস্টিকের ১টা বড় বস্তা। এ গুলো বড় ব্যাগে দেবেন। ধাতব পদার্থ ও দড়ি হ্যান্ড ব্যাগে বহনে বিমানের নিষেধাজ্ঞা আছে। নাইলনের দড়ির অর্ধেকটা বাইরে রাখুন, এটা দিয়ে বড় ব্যাগটা যাত্রার পূর্বে ভলো করে বাঁধতে হবে। প্লাস্টিকের বড় বস্তা ও নাইলনের দড়ির বাকীটা ফেরার সময় ক্রয়কৃত নুতন মালামাল প্যাকেট করতে খুব কাজে লাগবে।
সাবান ২টা, সাবানের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, নিলের ছোট কৌটা ১টা, ব্যবহারের তেল পরিমাণমতো, ভেসলিন মাঝারি সাইজের ১টা, টয়লেট পেপার ৩টা, টুথ পেস্ট ১টা, ব্রাশ ও মেসওয়াক ২টা, ছোট তালা-চাবি ১ সেট।
জুতা
ইহরাম অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য দুই ফিতার স্যান্ডেল বা জুতা ২ জোড়া। হালাল অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য সু চামড়ার জুতা ১ জোড়া। মা-বোনদের জুতায় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারা ২-৩ জোড়া আরামদায়ক জুতা সঙ্গে নেবেন। মসজিদে জুতা বহনের জন্য কাপড়ের ছোট ব্যাগ ২টা।
সুবিধার জন্য অল্প চিড়া ও গুড়, ২-৩ প্যাকেট বিস্কুটও সঙ্গে রাখা যেতে পারে। যাত্রাপথে বিশেষ করে আরাফাত ও মিনায় খাবার পৌঁছতে বিলম্ব হলে এগুলো কাজে আসবে। কারণ ওখানে দোকানপাট থাকে অনেক দূরে দূরে আর আপনি থাকবেনও অনেক ক্লান্ত। তা ছাড়া তাঁবু ছেড়ে অনেক দূরে গেলে একই ধরনের অসংখ্য তাঁবুর মধ্য থেকে নিজের তাঁবু সনাক্ত করা বেশ কষ্টসাধ্য।
চা-কফি পানে নির্ভরশীলরা কফির উপকরণ সঙ্গে নেবেন। সেই সঙ্গে মেলামাইনের থালা ১টা, গ্লাস ১টা, মগ ১টা, চা চামচ ১টা, ফল কাটার ছোট চাকু ১টা।
হজের মাসয়ালা-মাসায়েল সংক্রান্ত প্রামাণ্য একটা বই অথবা আপনার ব্যক্তিগত নোট। তেলাওয়াতের জন্য কোরআনে কারিমের কপি। যদিও মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববিতে জায়গায় জায়গায় চমৎকার সেলফে সুন্দরভাবে অসংখ্য কোরআন তেলাওয়াতের জন্য সাজানো আছে। কিন্তু আপনি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কোরআনের এ ছাপা দ্রুত পড়তে কষ্ট হতে পারে। তাই আপনার পছন্দের ছাপা কোরআন সঙ্গে রাখতে পারেন।
কোমর বেল্ট, টাকার ব্যাগ, গলায় ঝুলানো ব্যাগ এগুলো বিভিন্ন সংস্থা প্রচার ও সওয়াবে নিয়তে হাদিয়া দিয়ে থাকে। তাই এগুলো আগে কেনার দরকার নেই।
বৈদেশিক মূদ্রা
সরকারিভাবে ব্যাংকে অথবা বা বেসরকারি হজ কাফেলায় নির্ধারিত অঙ্কের টাকা জমা হলে খুব বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সাথে নেওয়ার দরকার নেই। কোরবানি আপনার হজ প্যাকেজের মধ্যে না থাকলে ৫০ হাজার টাকার সম পরিমাণ রিয়াল অথবা ডলার কোরবানি, কেনাকাটা ও চা-নাস্তার জন্য যথেষ্ট। অবশ্য কেনাকাটার বহরটা খুব বেশি হলে বা কেনাকাটার তালিকায় স্বর্ণালঙ্কার থাকলে ভিন্ন কথা।
পাসপোর্ট-ভিসা, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, মোয়াল্লেম অফিস থেকে দেওয়া আইডি কার্ডসহ জরুরি কাগজ-পত্র, মোবাইল (অভ্যস্থ হলে), চশমা (প্রয়োজন হলে), বৈদেশিক মূদ্রা, কাগজ-কলম ও চাবি নিজের সঙ্গে রাখুন। পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ১ সেট ফটোকপি বড় ব্যাগে রাখুন। চশমায় নির্ভরশীল হলে অতিরিক্ত ১টা চশমা ফিতাসহ বড় ব্যাগে রাখুন।
বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারপোর্টে বিভিন্ন কোম্পানি মোবাইলের সৌদি ‘সিম’ আপনাকে ‘ফ্রি’ উপহার দেবে। না পেলে মোবাইল ‘সিম’ আপনি মক্কা-মদিনায় কিনতেও পারবেন।
তবে হজের সফরে পুণ্যভূমিতে একান্ত বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মোবাইলে কথা না বলাই উত্তম। এতে পবিত্র কাবায় মনোসংযোগ বিঘ্নিত হয় এবং কোনো খারাপ সংবাদ পেলে মন উতলা হতে পারে। বিশেষ করে ইহরাম অবস্থায় এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা দরকার।
সর্বশেষ কাজ হলো- আপনার নাম-ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বর, আইডি নম্বর, ট্রাভেলিং এজেন্সির নাম ও নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদির কয়েকটি কপি হাতে লিখে বা কম্পিউটার কম্পোজ করে বিভিন্ন ব্যাগে রাখুন এবং তথ্যগুলো বড় ব্যাগের ওপর উজ্জ্বল ও অমুচনীয় কালি দিয়ে ইংরেজি বড় হরফে স্পষ্ট করে লিখুন।
প্রয়োজন মনে করলে বড় ব্যাগের অপর পাশে তা আপনি বাংলায়ও লিখিয়ে নিতে পরেন। আল্লাহ না করুন, ব্যাগ হারিয়ে গেলে বা আপনি নিজে পথ ভুলে গেলে তখন এগুলো খুব উপকারে আসবে।
পাসপোর্ট-ভিসা ও সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি মঞ্জুরসহ বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি পত্র ছাড়া বাকী উপকরণগুলো দু’দিনের কেনা-কাটার বিষয়। এ জন্য খুব বেশি পেরেশানির দরকার নেই। যাত্রার দিন পনের আগ থেকে উপকরণগুলো সংগ্রহ করলেই চলবে।
পরিশেষে হে কাবার পথিক! হজের নিয়ত সুদৃঢ় করুন। হজের প্রস্তুতি শুরু করুন, আপনি অভূতপূর্ব রহমতের ছোঁয়া অনুভব করবেন। হজের প্রস্তুতির পাশাপাশি মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা আপনার কাজকে আরও সহজ করবে। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক হজযাত্রীকে হজ্জে মাবরুর নসিব করুন। আমিন।
** পবিত্র হজযাত্রার প্রস্তুতিতে যেসব বিষয় মনে রাখা দরকার
** বদলি হজের বিধি-বিধান
** সমুদ্রপথে পুনরায় হজ রুট চালু করবে ভারত
** ২০১৮ সালের হজের প্রাক-নিবন্ধন শেষের পথে!
** হজের সময় ইরানকে অস্থায়ী দূতাবাসের অনুমতি সৌদির
** হাজীদের ট্রলি ব্যাগ দেবে এজেন্সি, তদারকি করবে হাব
** ২৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট, ১২ জুলাই থেকে টিকা
** হাজীদের স্বস্তি দিতে বহুমাত্রিক ডিজিটাল ছাতা
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
এমএইউ/