ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

র‌্যাবের নামে মামলা: প্রতিবেদনে ফের নারাজি লিমনের মায়ের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২২
র‌্যাবের নামে মামলা: প্রতিবেদনে ফের নারাজি লিমনের মায়ের

ঝালকাঠি: রাজাপুরের সাতুরিয়ায় ৬ র‌্যাব সদস্যের নামে মামলার প্রতিবেদনে ফের নারাজি দাখিল করেছেন গুলিতে পঙ্গু লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  আদালতের বিচারক এইচএম ইমরানুর রহমান সেই আবেদন গ্রহণ করে আগামী ৩ জানুয়ারি শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।

বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডবোকেট আক্কাস  সিকদার।

উল্লেখ্য ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকেলে কলেজছাত্র লিমনকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে পায়ে গুলি করে র‌্যাব সদস্যরা। এ ঘটনায় র‌্যাব লিমনের নামে সন্ত্রাস ও অস্ত্র আইনে মামলা দিলে আদালত তাকে অভিযুক্ত করলেও পরে রাষ্ট্র ক্ষমা করে দেয়।

কিন্তু ওই ঘটনায় লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে আদালতে ৬ র‌্যাব সদস্যের নামে রাজাপুর থানায় মামলা করেন ( মামলা নং-১৪, তাং-২৬/০৪/২০১১ইং)। যা এখনও আদালতে হত্যা চেষ্টা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত জি.আর-৬৫/২০১১(রাজা:) মামলা হিসেবে চলমান রয়েছে। এতে আসামি করা হয় বরিশাল র‌্যাব-৮ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. লুৎফর রহমান (৫৯২৬), কপোর্রাল মো. মাজহারুল ইসলাম (৪৬৬৬৬০), কনস্টেবল মো. আ. আজিজ (৪৫৯০) নায়েক মুক্তাদির হোসেন (৬৩১৬৫), সৈনিক প্রহলাদ চন্দ্র (৫৪৬), সৈনিক কার্তিক কুমার বিশ্বাস (১৮১২২০১)সহ আরও ৫/৬ জন র‌্যাব সদস্যকে।

দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে লিমনের বাম পা কেটে ফেলেন চিকিৎসক। সুস্থ হয়ে লিমন  রাজধানীর সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনবিভাগে পড়াশুনা করে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে সেখানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

নারাজি আবেদনে মা হেনোয়ারা বেগম উল্লেখ করেন, কলেজছাত্র লিমন ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টায় গরু আনতে মাঠে গেলে মোরসেদ জোমাদ্দার সন্দেহে র‌্যাব সদস্যরা পিস্তল, এসএমজি নিয়ে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে এবং টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকলে সে ডাক চিৎকার দেয়। তা শুনে দৌড়ে গিয়ে তার মা ছেলেকে কলেজছাত্র লিমন বলে পরিচয় দিলেও র‌্যাব সদস্যরা এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তার পা ভেঙে দেয় এবং হত্যার উদ্যেশ্যে বাম হাঁটুর উপরে গুলি করে। এরপর তারা লিমনকে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে র‌্যাব-৮ বরিশাল অফিসে নিয়ে যায়। তারা নিজেরা আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য লিমনেক আসামি করে রাজাপুর থানায় দুটি মিথ্যা মামলা (জি.আর- ৪৫/১১ (রাজা.) এবং জি.আর- ৪৬/১১ (রাজা.) দায়ের করে। এরপর বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ  (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পরে রাজাপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

সেখানে লিমন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজাপুর থানার পুলিশ লিমনকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা গুরুতর দেখে তার বাম পা কেটে ফেলেন।

এ ঘটনায় রাজাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে তারা মামলা না নিয়ে টালবাহানা করে। এরপর ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিস পিটিশন এম. পি-৫৩/১১ (রাজা.) ধারা-১৪৩/১৪৯/১৪৭/৩২৩/৩২৫/৩২৬ দায়ের করলে আদালত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এজাহার হিসেবে নেওয়ার আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি রুজু হওয়ার পর এসআই আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) নিয়োগ করা হয়।

এরপর মামলাটি আদৌ সরেজমিনে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত না করে র‌্যাব সদস্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মূল ঘটনাকে এড়িয়ে কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন তথ্য সংযোজন করে পরে এসআই আবদুল হালিম ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট ১৭৩ ধারায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করেন।

অসত্য, কাল্পনিক ও মনগড়া সেই প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে লিমনের মা ২০১১ সালের ৩০ আগস্ট নারাজি দাখিল করেন। এর শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারাজী আবেদন খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে তিনি ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন (নং ৩৫/২০১৩) দায়ের করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত সেই আবেদন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি করেন। অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস.কে.এম তোফায়েল হাসান ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল রিভিশন মঞ্জুর করেন।

রিভিশন মঞ্জুরের আদেশ পেয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একজন সহাকারী পুলিশ সুপারকে দিয়ে মামলাটি তদন্তের আদেশ দেন। এ আদেশের প্রেক্ষিতে পিবিআইর (হেডকোয়াটার) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম এ মামলার অস্টম এবং সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন।

তিনি মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত না করে চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে ৩২৬ ও ৩০৭ ধারায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

৫ পাতার ওই প্রতিবেদনের আড়াইপাতা জুড়ে আগের তদন্ত কর্মকর্তার বর্ণিত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। মো. আমিনুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ‘মামলাটি তদন্তকালে বাদীনির অভিযোগ মতে উপস্থাপিত তথ্যগুলোর হুবুহু সত্যতা পাওয়া না গেলেও ঘটনার সময় র‌্যাব ও সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির ফলে যে কোনো পক্ষের গুলিতেই ভিকটিম লিমন হোসেনের বাম পা বিদ্ধ হয়েছিল। লিমনের এমসি পর্যালোচনাসহ প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে মামলার ঘটনাটি পেনাল কোডের ৩২৬/৩০৭ ধারামতে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলকারী রাজাপুর থানার এসআই মো. হালিম তালুকদার এবং পিবিআইর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম কাল্পনিক তথ্য উল্লেখ করে আদৌ কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করায় তা বাতিলযোগ্য।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।