ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩২, ০৪ মে ২০২৫, ০৬ জিলকদ ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক: কর্মমুখর এক অধ্যায়ের সমাপ্তি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩৩, মে ৪, ২০২৫
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক: কর্মমুখর এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ফাইল ছবি

ঢাকা: চলে গেলেন দেশের আইন অঙ্গনের অন্যতম জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।  প্রায় ৪৫ বছরে আইন পেশার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন সিলেটের এই বাসিন্দা।

দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতেও। এক যুগ আগে চলে গিয়েছিলেন লন্ডনে। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশে ফিরে আইন অঙ্গন থেকেই রাষ্ট্র বিনির্মিাণে ভূমিকা রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ যাত্রা আর দীর্ঘ হলো না তার। প্রথিতযশা এ আইনজীবী রোববার রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বিভিন্ন তথ্য মতে, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জন্ম ১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে। বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সা‌লে তি‌নি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যা‌রিস্টার ডিগ্রি অর্জন ক‌রেন। ১৯৮৫ সা‌লের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ড‌নেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছি‌লেন। দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হন।  

ব্যা‌রিস্টার রাজ্জাকের দুই ছে‌লে ও এক মে‌য়ে রয়েছে। দুই ছেলেও ব্যারিস্টার এবং সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশা পরিচালনা করছেন।

সুপ্রিম কোর্টের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতেও। তিনি দীর্ঘদিন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আইনজীবী ছিলেন। এর মধ্যে তিনি ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। ২০১৫ সাল থেকে সেখানে আইন পেশা পরিচালনা করেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দল থেকে পদত্যাগের কথা জানান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তখন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বার্তায় বলেছিলেন, ‘তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া করি তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা আশা করি তার সঙ্গে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। ’

এরপর নতুন দল আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ১৭ আগস্ট সেই পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক আলোচিত একুশে টিভি মামলা, ইত্তেফাকের মামলা, অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলা, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সংসদ সদস্য পদ সংক্রান্ত মামলা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ নিয়ে মামলা ও ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া আবদুল কাদের মোল্লা, অধ্যাপক গোলাম আযম ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করেন। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উপদেষ্টাও ছিলেন। রয়েছে তার বিভিন্ন প্রকাশনা।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে বিমানবন্দরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী। আমি কোর্ট রুম ব্যারিস্টার। আমি আইনের অঙ্গনে আমার অবদান রাখার চেষ্টা করব। আইনের শাসন একটি অতি বড় জিনিস। দেশে যদি আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। তাহলে আমাদের রাজনীতি সফল হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। সুতরাং আইন অঙ্গনে আমার বিচরণ, আইন অঙ্গনে আমি থাকব। আইন অঙ্গনের মাধ্যমে আমি দেশ এবং জাতির খেদমত করার চেষ্টা করব। ’

এরপর সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।

ইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।