নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভার আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক মেয়র মো. মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা কে এম মাহমুদ হাসানের বিরুদ্ধে ২৮৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপেক্ষিতে গত ২২ জুন তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেন ঢাকা জেলা জজ অতিরিক্ত আদালতের যুগ্ম জেলা জজ রুবায়েত ফেরদৌস।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাবেক মেয়র মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলে কে এম মাহমুদ হাসান ২০১৯ সাল রূপালী ব্যাংক (মামলা নং ৯৬/১৯) থেকে ১৬৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, যা বর্তমানে ২০৯ কোটি টাকা হয়েছে।
২০১১ সালে সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে তিন ধাপে ঋণ নেয় এই পরিবার। সাউথইস্ট ব্যাংকের তিনটি মামলা সূত্রে জানা যায়, ৭৮ কোটি ৮৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা, ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ২৭ কোটি টাকা ঋণ নেয় পরিবারটি। রূপালী ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে মোট ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন এই পরিবার।
এ ছাড়াও কাগজ ব্যবসায়ী মো. ইসহাক দুলালের কাছ থেকে ব্যবসায়িক লেনদেনে দুই বারে ১১ কোটি ৩ হাজার টাকা ঋণ নেন সাবেক মেয়র মাহবুবুর রহমান খান। এ ঘটনায় ইসহাক দুলাল দুটি মামলাও করেন। এ ছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (মামলা নং ১৪৭৪২/২১), এনআরবি ব্যাংক (মামলা নং ৩৪৮৯, ৩৪৯০, ৩৪৯১/২০১২ এবং৫৯৯০/২৩) ও রাজনৈতিক নানা মামলাসহ এই পরিবারের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে।
বর্তমানে বাবা ও ছেলে এসব ঋণের টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করে বিদেশে পালানোর পাঁয়তারা করছেন। পরে ভুক্তভোগী ইসহাক দুলাল একটি মামলা (মানিসুট মামলা নম্বর: ০২/২০২৪) করে আদালতে আবেদন করেন।
আদালত আবদেনের বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করে, মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলে কে এম মাহমুদ হাসানকে সশরীরে উপস্থিত হতে আদেশ দেন। কিন্তু বারবার সুযোগ পেয়েও তারা আদালতে হাজির হননি।
এমন পেক্ষিতে ২২ জুন তারাব পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা কে এম মাহমুদ হাসান সিয়ামকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা জেলা জজ অতিরিক্ত আদালতের যুগ্ম জেলা জজ রুবায়েত ফেরদৌস।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ইসহাক দুলাল বলেন, মাহবুব ও তার ছেলে সিয়াম ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। স্থানীয় সাবেক মন্ত্রী ও তার ছেলের সব অবৈধ কার্যকলাপের সুবিধাভোগী এই বাবা ও ছেলে। জুলাই আন্দোলনে শত শত কোমলমতি ছাত্রদের ওপর হামলা ও গুলির নির্দেশদাতা ছিলেন তারা। এদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাসহ একাধিক থানায় মামলাও রয়েছে।
এই ভুক্তভোগী আরও বলেন, সরকার পতনের পর বাবা-ছেলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো আশ্রয় না পেয়ে দেশত্যাগ করার চেষ্টা করেন। দেশের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বাবা-ছেলেকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেওয়ার অনুরোধ রইল।
প্রসঙ্গত, প্রায় ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুবুর রহমান খান ও তার স্ত্রী মহিমা রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা ও দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ডিএইচবি/এমজেএফ