ছিলেন বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি। রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের মধ্যে এক অঙ্গ তথা বিচার বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি।
এ নিয়ে সারা দেশের মতো দিনভর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা সমালোচনা চলে। বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক মূলত বিতর্কের মধ্যে পড়েছিলেন নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে পরিচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দেওয়া রায় নিয়ে। একইসঙ্গে সংক্ষিপ্ত রায় বদলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে। এই রায় বাতিলের পর দেশের কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। পাশাপাশি এ নিয়ে সব সময় বিচারপতি খায়রুল হকের সমালোচনা করে আসছিল আওয়ামী লীগ বিরোধী জোট।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) তার গ্রেপ্তার নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। তাদের মতে, অনতিবিলম্বে এবং সব কিছুর আগে বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার এমনভাবে করতে হবে, যাতে জনতা বুঝতে পারে এই দেশে অবিচার করলে, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করলে কী হয়! ভবিষ্যতেও বিচারপতিরা সাবধান হয়ে যাবেন।
বিচার দেখার অপেক্ষায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রায় নিয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বিস্তারিত রায় সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে কোনো (আরও দুই বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন) কানেকশন নেই। ১৬ মাস পরে রায় দিয়েছেন। যখন ফ্যাসিস্ট সরকার সংসদে একটা আইন করলেন। সেটা দেখে রায় দিয়েছেন। এটা আমার ওকালতি জীবনে দেখি নাই। টি এইচ খান, কামাল হোসেন ও অ্যামিকাস কিউরিদের সঙ্গে আলাপ করেছি, বিশেষ করে ড. কামাল হোসেন বললেন, এটা বিচারিক অসাধুতা। ওই রায় দেওয়া এক বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা, তিনি বললেন, যা আমরা ওপেন কোর্টে প্রকাশ করলাম, এখন পূর্ণাঙ্গ রায়ে তার কোনো অংশ আমরা দেখছি না।
‘এই জন্য তখন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলাম খায়রুল হক আপিল বিভাগের রুলস লঙ্ঘন করেছেন। তিনি যখন রায় দিয়েছিলেন তখন তার শপথ ছিল না (অবসরে ছিলেন)। ....এই রায়ের আইনগত কোনো বৈধতা নেই। উদ্দেশ্যেমূলকভাবে গণতন্ত্র নস্যাৎ করার জন্য, চিরতরে ধংস করার জন্য এই কাজ করেছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকার। সে জন্য আমি বলেছিলাম আজকে হয়তো খায়রুল হকের বিচার হবে না, তবে এমন একদিন আসবে জনতার আদালতের এই বিচার হবে। ’
বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করায় সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, এই খায়রুল হকের কারণে একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয় নাই। শুধু তাই নয়, এই খায়রুল হকের কারণে আয়নাঘর হয়েছে। এই খায়রুল হকের কারণে হাজার মায়ের কোল খালি হয়েছে। এই খায়রুল হকের কারণে লক্ষ লক্ষ অবৈধ মামলা হয়েছে। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কটাক্ষ করেছেন। আমি আগেও বলেছি জিয়া পরিবারের ওপর যারাই হাত দিয়েছে তাদেরই হাত পুড়ে গিয়েছে। এরশাদ হাত দিয়েছিল এরশাদের হাত পুড়ে গেছে। মঈন উদ্দীন-ফখরুদ্দীন হাত দিয়েছিল, তাদের এই দেশ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। আর এই ফ্যাসিস্ট সরকার হাত দিয়েছিল তাদেরকেও চরমভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। এখন খায়রুল হকের বিচার কিভাবে হয় সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাড়ির মামলার রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, এই খায়রুল হক খালেদা জিয়াকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তিনি সেদিন কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, আমি কার কাছে বিচার চাইব? বলেছিলেন, আমি এক কাপড়ে চলে এসেছি। এর জন্য খায়রুল হক দায়ী। কোনো অবস্থাতেই এই দায় খায়রুল হক এড়াতে পারেন না। তাই সরকারপ্রধানকে বলব, অনতিবিলম্বে এবং সব কিছুর আগে খায়রুল হকের বিচার এমনভাবে করবেন, যাতে জনতা বুঝতে পারে এই দেশে অবিচার করলে, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করলে কী হয়! ভবিষ্যতেও বিচারপতিরা সাবধান হয়ে যাবেন।
জয়নুল আবেদীনের আশা এই সরকার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করবেন। যাতে মানুষ মনে করে এই আদালতে বিচার হচ্ছে, সেটা জনগণের আদালত। তাহলে পরে খুশি হবেন বলে জানান এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।
১৫ বছর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি খায়রুল হকের কারণে: মাহবুব উদ্দিন খোকন
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিচারপতি এ বিএম খায়রুল হকের বিচারিক জীবনে এবং অবসরে যাওয়ার পরে তার নেওয়া অনেক পদক্ষেপ বাংলাদেশে বিতর্ক, রাজনৈতিক সংকট ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তার কিছু রায়ের কারণে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অত্যন্ত ক্ষতিকর অনেক ঘটনা ঘটেছে। সর্বজনস্বীকৃত, জনগণের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছিল। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সংসদে এ ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত করেছিলেন। খায়রুল হক সাহেব প্রধান বিচারপতি থাকাকালে সেটি বিলুপ্ত করেছেন।
‘তার এই রায়ের ফলে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক বলয়ের প্রভাব যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সম্পূর্ণ ধংস করে দিয়েছে। দেশে রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া রাজনৈতিক সরকারের অধীনে চলে গেছে। ফলে গত ১৫ বছর কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ’
বিচারপতি খায়রুল হক রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়েছেন উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৩৯ লাখ টাকা নিয়েছেন চিকিৎসার নামে। অন্য বিচারপতিরা এই সুবিধা পেয়েছেন? নিয়েছেন কেউ? একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন। প্রধান বিচারপতির অধীনে! প্রধান বিচারপতি থেকে নিচের পদে যাওয়াটা তার যে ব্যক্তিত্ব ছিল না এটা তার প্রমাণ করে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত সে সরকারের কোনো না কোনো দায়িত্বে ছিল এই রায়ের (তত্ত্বাবধায় সরকার বাতিলের রায়) বিনিময়ে।
‘তার সুষ্ঠু বিচার চাই। যে লোকটা ১৫ বছর একটা দেশকে অস্থিতিশীল করে দিয়েছে। এই গণতন্ত্রের জন্য হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হোক বা অন্য আদালতে হোক তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। ভবিষ্যতে কোনো প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি ও বিচারক যেন এ অপরাধ না করে’, যোগ করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।
বিচারের নামে অবিচার করে গেছেন খায়রুল হক: আহসানুল করিম
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, যেদিন থেকে বিচারপতি খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হন, সেদিন থেকে বিচার বিভাগ নষ্ট হওয়া শুরু হয়। তিনি বিচারের নামে অবিচার করে গেছেন। তিনি তার নিজস্ব দলের প্রতি যে আনুগত্য ছিল প্রত্যেকবার সেটা চরিতার্থ করেছেন। তার আচরণে, তার শারীরিক ভাষায়, তার রায়ে পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়েছে। যেটি একজন বিচারপতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধতা হওয়া উচিত।
‘ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে যে রায় হয়েছে, তাতে করে তিনি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। মৌলিক কাঠামোর নাম করে যে বিষয়টিকে তিনি বাতিল করে দিয়েছিলেন সেটি মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। সেখানে শুধুমাত্র একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য তিনি ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ে আইনের অপপ্রয়োগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ বহু বছর একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পায়নি। এর প্রধান কারিগর ছিলেন খায়রুল হক। ’
বিচারপতি খায়রুল হকের দলীয় মনোভাব নিয়ে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, তার সবচেয়ে বড় অন্যায় ছিল, তিনি একটি বিশেষ দলের সমর্থক। বিশেষ দলের যারা কর্মী সমর্থক, তাদের প্রতি তার অসাধারণ আনুগত্য বিচারকাজে বার বার সেটি প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং বিচারকের যে বিচক্ষণতা, নিরপেক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হয় সেটি তার ছিল না। এটাই অবধারিত যে আজ হোক, কাল হোক এ পৃথিবীতে তার বিচার হবে। সে কারণে আজ তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এটাই স্বাভাবিক।
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, শুধু বিচারপতি খায়রুল হক নয়, প্রত্যেক নাগরিকের সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। তিনি সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার হকদার, পেতেই পারেন। আইন আইনের গতিতে চলবে।
‘আরেক জন বিচারপতি মানিক (এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী) যে কর্মকাণ্ড করেছেন ,এই জুডিসিয়ারিকে বার বার করে অপমাণিত করেছিলেন, প্রশ্নের মুখে ফেলেছিলেন, সেভাবে বিচারপতি মানিকের যে রকম পরিণতি হয়েছে বিচারপতি খায়রুল হকের তেমনি হবে সেটা অবধারিত ছিল।
খায়রুল হক একজন জ্ঞানপাপী: ব্যারিস্টার কায়সার কামাল
শেখ হাসিনার চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার ছিলেন বিচারপতি খায়রুল হক উল্লেখ করে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, সারা বাংলাদেশের মানুষ তাকে চিনে একজন জ্ঞানপাপী হিসেবে। পবিত্র চেয়ারে বসে স্বেচ্ছায় উদ্দেশ্যেমূলকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করেছিলেন।
বিচারপতি খায়রুল হকের প্রেপ্তারে আইনজীবী সমাজ আশান্বিত। সন্তুষ্ট বলছি না, আশান্বিত। তখনই সন্তুষ্ট হবে, যখন খায়রুল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। তখনই সন্তুষ্ট হবে যখন এই খায়রুল হকের শাস্তি দেখে বর্তমান এবং ভবিষ্যতে কোনো বিচারক খায়রুল হক হওয়ার চেষ্টা করবেন না বলে মনে করেন এই আইনজীবী।
জাতির জন্য একটা দুঃখজনক সংবাদ: শিশির মনির
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটা নিশ্চয় কোনো ভালো খবর নয়। এটা এ জাতির জন্য একটা দুঃখজনক সংবাদ। দেশের প্রধান বিচারপতি যারা থাকেন তাদের মান-ইজ্জতের সঙ্গে বিচার বিভাগের মান-ইজ্জত জড়িত। বিচার বিভাগের দায়িত্বপালনকারীদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জাতীয় ভাবমূর্তি জড়িত। ফলে যখন একজনের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ আসে তখন বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে মামলায় বিচারপতি খায়রুল হককে জেলে নেওয়া হোক না কেন, এটা বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটা খারাপ সংবাদ। অতীতে দেখেছি প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এটাও খারাপ সংবাদ।
কেন এরকম দেখতে হবে, এমন প্রশ্ন রেখে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বাংলাদেশের বিচারপতিরা যে শপথ নেন, সেখানে বলা আছে কোনো রকম রাগ, অনুরাগ বিরাগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। কিন্তু এই বিচারপতি খায়রুল হক অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে। এটা কী আসলে? অভিযোগটা কী? অভিযোগটা হলো, একটা আদেশ যা উন্মুক্ত আদালতে ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় দেওয়ার সময় এই আদেশটাকে পরিবর্তন করে ফেলেছেন। এই যে পরিবর্তন করে ফেলা, এই পরিবর্তন করে ফেলার মাধ্যমে যে বিচারিক প্রতরাণা করা হয়েছে, এই প্রতরাণা আমরা আর কোনোভাবেই বিচার বিভাগ থেকে দেখতে চাই না। যেই করুক না কেন, যত বড় বিচারকই করুক না কেন, ইটস এন অফেন্স (এটি একটি অপরাধ)। বিচারিক আদালতের ঘোষিত রায় পরবর্তীতে আরেকটি বিচার ছাড়া এইভাবে পরিবর্তন করে ফেলা যায় না। আমি মনে করি এটি মার্জনা অযোগ্য, এমনটা হতে পারে না।
‘বাংলাদেশে সব চাইতে বিপজ্জনক যা ঘটেছে, সেটি বলেছিলেন বিচারপতি টি এইচ খান। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলায় অ্যামিকাস কিউরি ছিলেন। তিনি এসে আদালতে বলেছেন, আপনারা আজকে যে আগুন নিয়ে খেলছেন, দেশ কিন্তু এই আগুন জ্বলবে। যদি এই সিস্টেম (ব্যবস্থা) আপনারা বাতিল করেন। আপনারা দেখবেন, বিগত ১৫ বছরে আমাদের এই মাতৃভূমিতে আগুনই জ্বলেছে। নির্বাচন কমিশন ধ্বংস হয়ে গেছে, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে আমি মনে করি বিচারপতি খায়রুল হক যদি এই প্রতারণা না করতেন তাহলে পরবর্তীতে এই ধরনের পরিস্থিতি বা বাস্তবতা জাতিকে বহন করতে হতো না। এই জন্য বিচার হবে আইন অনুযায়ী। বিচার আইনের বাইরে করা যাবে না। যে আইনে তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন সেই আইন অনুযায়ীই তার বিচার করতে হবে। বিচারের ক্ষেত্রে যাতে অবিচার করা না হয়, সেটাও আমরা সতর্কতার সঙ্গে বলতে চাই। কোনো ব্যক্তিকেই যেন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হয়। যতটুকু অপরাধ করেছেন এতটুকু শাস্তি যেন তিনি পান এটাই আমাদের পক্ষ থেকে কথা থাকবে’, উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির।
বিচারপতি খায়রুল হকের কর্মজীবন
এ বি এম খায়রুল হক ১৯৪৪ সালের ১৮ মে মাদারীপুরের রাজৈর থানার আড়াইপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক পাস করেন। লন্ডন থেকে ১৯৭৫ সালে বার অ্যাট ‘ল ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ১৯৭৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৮২ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
১৯৯৮ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি এবং ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। পরের বছর ১৭ মে তিনি অবসরে যান।
হাইকোর্টে বিচারপতি থাকাকালীন তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ও পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় এবং আপিল বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলার রায় দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। এ পদে তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির প্রাপ্য বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধাদি পেয়ে আসছিলেন। পরবর্তী ২০১৬, ২০১৯ ও সর্বশেষ ২০২২ সালে তিন বছর করে আবারও নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ মামলা হয়।
ইএস/এমজেএফ