ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ সফর ১৪৪৭

আইন ও আদালত

ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলায় আসামি ২০৯, গুম-খুনের ৪৫০ অভিযোগ 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:২৩, আগস্ট ৫, ২০২৫
ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলায় আসামি ২০৯, গুম-খুনের ৪৫০ অভিযোগ  ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন রাজনীতিবিদ, আলেম-ওলামা, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এমন অভিযোগ বহু বছর ধরে থাকলেও ন্যায় বিচার পেতে আদালতের দ্বারস্থ হতেন না তারা।

কারণ ওই সময়ের সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভিকটিমরা অভিযোগ করার সাহস করতেন না।  

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সেই সরকারের পতন হয়। এরপর আইন সংশোধন করা হয়। আর নিপীড়নের শিকার সেই সব ব্যক্তি ও তাদের পরিবার দ্বারস্থ হতে থাকেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনের কাছে।  

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাযজ্ঞের অভিযোগসহ গুম-খুন-নির্যাতনের মোট অভিযোগ এসেছে ৪৫০টি। বিবিধ মামলা হয়েছে ৩০টি। এর মধ্যে চার মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠন করেছেন দুই মামলায়। এর একটিতে সাক্ষী চলমান রয়েছে (শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা)।  

৩০ মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট আসামি করা হয়েছে ২০৯ জনকে। এরমধ্যে ৮৪ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। এ ৮৪ জনের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, বিচারপতি, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা রয়েছেন।

সম্প্রতি চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জুলাই হত্যার বেশ কয়েকটি মামলার বিচার শেষ হবে। গত এক বছরে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা মনে করি, এ বছরের মধ্যেই বেশ কয়েকটি মামলার বিচার শেষ করা সম্ভব। সে গতিতেই বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

এ ট্রাইব্যুনালে ইতোমধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অনেকের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে। তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের বিচার ট্রাইব্যুনালে চলছিল।

এ অবস্থায় সরকার পতনের পর প্রসিকিউটররা পদত্যাগ করেন। তারপর ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর নিয়োগের কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ।

এতে প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

পরবর্তীতে ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুর্নগঠন করা হয়। আইন সচিব শেখ আবু তাহের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ (১৯৭৩ সালের আইন নং ২১)-এর ধারা ৬-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীকে ওই ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো।  

এরপর চলতি বছরে ৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে। ট্রাইব্যুনালের সদস্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং মাদারীপুরের জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আইন ও আদালত এর সর্বশেষ