ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সোমবার থেকে সুপ্রিম কোর্টে ‘ব্যস্ত সপ্তাহ’

ইলিয়াস সরকার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৬
সোমবার থেকে সুপ্রিম কোর্টে ‘ব্যস্ত সপ্তাহ’

ঢাকা: পক্ষকালব্যাপী অবকাশকালীন ছুটি শেষে সোমবার (০২ মে) খোলার পর থেকে  বৃহস্পতিবার (০৫ মে) পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে জনগুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় এবং শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

হাইকোর্ট বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ মামলার মধ্যে রয়েছে বিচারকদের অপসারণে সংসদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জের রায়।

অপরদিকে মঙ্গলবার (০৩ মে) আপিল বিভাগে রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় পুর্নবিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি।

এছাড়াও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা ১৬৮ মামলা পুনঃশুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রয়েছে সোমবার।
 
ষোড়শ সংশোধনী
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
 
সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে এ রিট আবেদন দায়ের করেন।
 
হাইকোর্ট এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
 
গত বছরের ২১ মে রুলের শুনানি শুরু হয়। গত ১০ মার্চ এ রুলের শুনানি শেষে আগামী ০৫ মে রায়ের দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ রায় ঘোষণা করবেন।
 
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
 
এছাড়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানি করেছেন শীর্ষ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি।
 
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।
 
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামরিক ফরমান দিয়ে আমাদের সংবিধানের যে বিধানগুলো পরিবর্তন করা হয়েছিল, সেগুলোকে বাতিল করাই হল আমাদের পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই ৯৬ অনুচ্ছেদ যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল মার্শাল প্রক্লামেশন দ্বারা সেটা বাতিল করে বাহাত্তরের সংবিধানে আমরা ফিরে গেছি’।

তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালে জনগণের প্রতিনিধিরাই এটা প্রণয়ন করেছিলেন। এর পেছনে ছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণা। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে সংবিধানের যে সংশোধন করা হয়েছিল সামরিক ফরমান দিয়ে, এটি জাতির জন্য লজ্জাজনক ও কলঙ্কজনক। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্যই পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনী’।
 
বাদীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারক অপসারণের বিধানটি ছিল। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ে আপিল বিভাগও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওই বিধানটি সুরক্ষা দিয়েছিলেন। এ সুরক্ষার পর পঞ্চদশ সংশোধনী যখন পাস হয়। তখন সংসদ ওই ৯৬ অনুচ্ছদকে সংরক্ষিত করেছিল’।
 
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে কিছুদিন পরে ৯৬ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে এ ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ পরিবর্তন হয়েছে সংবিধানের মৌল কাঠামোকে পরিবর্তন করে। কারণ, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে থাকা ৭(বি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে মৌল কাঠামো পরিবর্তন করা যাবে না’।
 
মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমরা বলেছি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মূল কাঠামো। আনোয়ার হোসেন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মূল কাঠামো। যেহেতু মূল কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছে, সেহেতু এটি সংবিধান পরিপন্থী’।
 
তার মতে, ‘দেশের সংসদ সদস্যরা শুধু আইন প্রণয়ন করেন না, তারা নির্বাহী ও প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করেন, তাহলে তাদের কাছে যদি অপসারণের ক্ষমতাটা দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর এক ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ হতে পারে’।
 
১৬৮ মামলা
নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া ১৬৮টি মামলা পুনঃশুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের অনলাইনে প্রকাশিত সোমবারের কার্যতালিকায় পূর্ণাঙ্গ রায় না হওয়া এ মামলাগুলো রাখার বিষয়টি দেখা যায়।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের এক নম্বর বেঞ্চে ১৬৯ থেকে ২৭৫ পর্যন্ত ক্রমিকে থাকা মামলাগুলো পুনঃশুনানির জন্য রাখা হয়েছে।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে দুই নম্বর বেঞ্চের তালিকার ২১২ থেকে ২৭২ নম্বর ক্রমিকে পুনঃশুনানির জন্য মামলাগুলো রাখা হয়েছে।

নিজামীর রিভিউ
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ  (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদনের শুনানির জন্য মঙ্গলবার (০৩ মে) দিন ধার‌্য রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে। অন্য তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
 
গত ২৯ মার্চ সকালে ৭০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন করেন নিজামীর আইনজীবীরা। এতে মোট ৪৬টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির রায় বাতিল করে খালাস ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আরজি জানানো হয়েছে।
 
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ০৬ জানুয়ারি নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আর পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয় গত ১৫ মার্চ
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।