সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।
বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় গত বছরের ২ জুন বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ।
রায়টির লেখক ছিলেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। আর বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা তাতে একমত পোষণ করেন। পরে ডিসেম্বর মাসে এ রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।
রায় প্রকাশের পর হাইকোর্টে এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বাংলানিউজকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছি।
‘রায়ে আদালত কয়েকটি কারণ বলেছেন, তা হলো-২০০১ সালে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো বিজিএমইএকে এ জমি দেয়। কিন্তু তখন তাদের (রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো) মালিকানা ছিলো না। সুতরাং এটা অবৈধ। ওই জমিটি ডোবা হিসেবে খতিয়ানে আছে, এটাকে ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এটাও অবৈধ। ভবন বানাতে পরিবেশের অবস্থানগত ছাড়পত্র নিয়েছে বিজিএমইএ। কিন্তু এটা ভবন নির্মাণে নয়’।
১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে বিজিএমইএ ভবনটি তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে।
রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ানবাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই প্রতিবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনিরউদ্দিন আদালতে উপস্থাপন করেন।
পরদিন ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন। এ রুলের উপর শুনানিতে আদালতকে আইনি সহায়তা দিতে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সাতজন আইনজীবীকে আদালত বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সাত আইনজীবী হলেন- বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ড. আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন, অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ও পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তার রায়ে বিজিএমইএ’র ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙতে বলা হয়। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিলো সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলে ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, ‘হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প’। আদালত বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদের টাকা তাদের দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে ফেরৎ দিতেও বলেন। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। যেটা গত বছরের ২ জুন খারিজ হয়ে যায়। বিজিএমইএ আবার রায় পুর্নবিবেচনা চেয়ে আবেদন করে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
ইএস/এটি
