বিচারিক আদালতের পুরো রায়ের সঙ্গেই একমত হয়েছেন উচ্চ আদালত। ফলে মোহাম্মদ মাকসুদুল হাসান অনিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজের দশ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড বহাল রয়েছে।
এছাড়া আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানির ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং আসামি সাদমান ইয়াছির মাহমুদের ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ডও বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (০২ এপ্রিল) রাজীব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের এ রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ফয়সালসহ সাতজনের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। গ্রেফতারের পর মামলাটি বাতিল চেয়ে রানার করা আপিলও খারিজ করেছেন।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পাওয়া আসামিদের শাস্তি বৃদ্ধি চেয়ে ব্লগার রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিনের করা ক্রিমিনাল রিভিশন (শাস্তি পুনর্বিবেচনা) আবেদনটিও খারিজ হয়ে গেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে রাজধানীর পল্লবীতে তার বাসার সামনে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ওই ঘটনায় রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিনের করা মামলায় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ে মোহাম্মদ মাকসুদুল হাসান অনিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে দশ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানিকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামি সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায়ের পর গত বছরের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স আসে। সাজা বাড়াতে ক্রিমিনাল রিভিশন আবেদন জানান রাজীবের বাবা। পরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ফয়সালসহ সাতজন আপিল ও জেল আপিল করেন। গ্রেফতারের পর মামলাটি বাতিল চেয়ে রানার করা আপিলটি ছিল অন্য আদালতে, যার শুনানিও এ আদালতেই নেওয়া হয়েছে।
বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরের জন্য উচ্চ আদালতের অনুমোদন লাগে। আর এ অনুমোদনই মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ বা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত।
পরে প্রধান বিচারপতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের পর পেপারবুক ছাপানোর জন্য সরকারি ছাপাখানায় পাঠানো হয়।
মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, জব্দ তালিকা, ময়না তদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও বিচারিক আদালতের রায়ের সমন্বয়ই হচ্ছে পেপারবুক। ৯২০ পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুতের পর গত বছরের মাঝামাঝিতে ছাপাখানা থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
গত বছরের ০৭ নভেম্বর এ মামলার সাত আসামির আপিল ও জেল আপিল, মামলা বাতিলে রানার আপিল, ডেথ রেফারেন্স ও ক্রিমিনাল রিভিশনের শুনানি একসঙ্গে শুরু হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা। আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, মোশাররফ হোসেন কাজল ও মো. আহসান উল্লাহ ।
গত ০৯ জানুয়ারি শুনানি শেষে যেকোনো দিন দেওয়া হবে জানিয়ে রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। পরে গত ২৭ মার্চ রায়ের দিন জানান এ আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
ইএস/এএসআর
** খণ্ডিত রায় প্রত্যাখ্যান করলেন রাজীবের বাবা
** ব্লগার রাজীব হত্যার আপিলের রায় ঘোষণা চলছে