জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে সাফাত আরা সোবহানের জীবন ও সম্পত্তির অধিকার রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং অসহায় মানুষদের জন্য আলাদা বিভাগ সৃষ্টির নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
চার সপ্তাহের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, পরিচালক (স্টেট), সমাজকল্যাণ বিভাগের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গণমাধ্যমে ‘বৃদ্ধাশ্রমে এক মায়ের আকুতি’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
পরে মনজিল মোরসেদ বলেন, সাফাত আরা সোবহানের বনানীর ১১ নম্বর রোডের এম ব্লকের ৭৮ নম্বর স্বামীর বাড়িটি যাতে কউ হস্তান্তর করতে না পারে বা মর্টগেজ দিতে না পারে সে ব্যাপারে কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাফাত আরা সোবহান ওরফে পারুল। তিনি সব হারানো বাবা-মায়ের সন্তানদের আগলে রেখেছিলেন। এখন তারা প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক ও উচ্চশিক্ষিত কর্মকর্তা। সাফাত আরা সোবহানের বনানীর ১১ নম্বর রোডের এম ব্লকের ৭৮ নম্বরে স্বামীর ‘সানড্রপ’ নামে আলিশান বাড়ি রয়েছে। আর উত্তরায় বাড়ি-গাড়িসহ দেড়শ কোটি টাকার সম্পত্তি ও সম্পদ আছে। অথচ তিনি এখন রাজধানীর ইন্দিরা রোডস্থ ২১/১ নম্বর ‘নিবন্ধন’ নামক বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন। সাফাত আরা সোবহানের খ্যাতনামা চিকিৎসক স্বামী প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ১৯৮৩ সালে পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ে করেন। ওই চিকিৎসক আগের সংসারের শেখ মাহবুবুর রহমান, সানজিদা সোবহান ও নাহিদা সোবহান নামে ৩ ছেলেমেয়ে রেখে গেছেন। ’
‘তাদের মধ্যে বড় ছেলে এখন বারডেম হাসপাতালের একজন বড় চিকিৎসক। তার আপনজন বলতে রয়েছে ছেলের বউ আর নাতি-নাতনি। বনানীর ‘সানড্রপ’ নামের আলিশান ভবনটিতেই সাফাত আরা পারুল বেগমের থাকার কথা। একসময় কোলে-পিঠে করে স্বামীর আগের সংসারের ছেলেকে মানুষ করেছেন। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর যখন শেষ সম্বল হিসেবে আঁকড়ে ধরবেন ছেলের হাত, তখনই সেই হাত ফসকে ছেলে সৎ মা বলে হত্যার হুমকি ও ভয় দেখিয়ে ধুর ধু করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন’।
‘তার স্বামীর মৃত্যুর পর একদিন তুমুল ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই গভীর রাতে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন এই চিকিৎসক-ছেলে। এরপর সাফাত আরা সোবহান কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় অসহায়ের মতো ঘুরতে থাকেন। এসময় এক সহৃদয় ব্যক্তি সহায়তার হাত বাড়িয়ে তাকে বনশ্রী এলাকায় অসহায় পারুল বেগমকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেন। সেখান থেকেই তিনি স্বামীর বাসায় বারবার ফেরার চেষ্টা করে আসছিলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় আকুতি মিনতি করছেন বৃদ্ধ বয়সে যেন স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করতে পারেন। কিন্তু তার সেই চিকিৎসক-ছেলে সৎ মা বলে তাকে স্বামীর বাড়িতেই ঠাই দিচ্ছেন না!’
‘সাফাত আর সোবহান বলেন, আমি এখন মানবেতর জীবন যাপন করছি। এনিয়ে আমি সহায়তার জন্য আইন ও সালিসকেন্দ্রে (অসক) গিয়ে ছিলাম। তারা আমার ছেলের সঙ্গে কয়েকবার কথাও বলেছেন। কিন্তু আমার সন্তানরা আমাকে ফিরিয়ে নিতে নারাজ। ওরা আমার নিজের প্রাপ্য সম্পদও আমাকে ফেরৎ দিচ্ছে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩,২০১৭
ইএস/জেএম