বৃহস্পতিবার (০৭ ডিসেম্বর) মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিলে বাদিনী ফরিদা আখতারের সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট খুরশিদ আলমের আদালত এ আদেশ দেন।
তবে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেজবাহ আদেশের পরে বলেন, ‘প্রকাশ্য আদালতে বিচারক নারাজি দাখিলে সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী বছরের ০৯ জানুয়ারি নারাজি দাখিলের দিন ধার্য করেছিলেন।
গত ০৯ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়নি উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। একই সঙ্গে মিথ্যা অপহরণের মামলা দিয়ে বিভ্রান্ত ও হয়রানি করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ২১১ ও ১০৯ ধারায় ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলা দায়েরের অনুমতি চান।
তদন্তকারী কর্মকর্তার দাবি, তদন্তকালে বিভিন্নজনের জবানবন্দিসহ অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণ বলছে, ফরহাদ মজহার অপহৃত হননি। আর তার স্ত্রী ফরিদা আক্তার অপহরণের মিথ্যা অভিযোগ করেন। ফরহাদ মজহারও তার জবানবন্দিতে অপহরণের কথা উল্লেখ করেন। স্ত্রী মিথ্যা অভিযোগ করলেও পরবর্তীকালে তা প্রত্যাহার করেননি।
মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় ২ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে।
প্রসিকিউশন মামলা দাখিলের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের জিআরও শাখার এসআই নিজাম উদ্দিন জানান, ‘এখন আমরা আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট আদাবর থানায় পাঠাবো। সেখানে আদেশ যাওয়ার পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে প্রসিকিউশন মামলা দাখিলের ব্যবস্থা নেবেন’।
গত ০৩ জুলাই ভোরে রাজধানীর শ্যামলী এলাকার বাসা থেকে বের হওয়ার পর ফরহাদ মজহার অপহৃত হন বলে আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন তার স্ত্রী ফরিদা আখতার।
পুলিশ প্রথমে ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে খুলনায় তার অবস্থান শনাক্ত করে। পরে খুলনার পরিচিত একটি রেস্টুরেন্টে তিনি খাবার খেয়েছিলেন বলে প্রমাণ পায়। এরপর খুলনা থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসে মিস্টার গফুর নামে টিকিট কাটেন ফরহাদ মজহার। যশোরের অভয়নগরের নোয়াপাড়া এলাকায় বাসে তল্লাশি চালিয়ে রাতেই তাকে উদ্ধার করা হয়।
পরদিন ০৪ জুলাই সকালে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় তাকে। দুপুরের দিকে আদাবর থানা থেকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয় ফরহাদ মজহারকে। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে তিনি অপহত হয়েছিলেন বলে জবানবন্দি দেন। এরপর আদালত তাকে নিজ জিম্মায় বাড়ি ফেরার অনুমতি দেন।
মামলাটিতে গত ০৬ জুলাই হানিফ পরিবহনের এক কর্মচারী নাজমুস সাদাত সাদী এবং গত ১০ জুলাই অর্চনা নামে এক নারী সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।
ফরিদা আখতারের করা মামলায় বলা হয়, ‘আমার স্বামী সাধারণত খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগেন এবং লেখালেখি করেন। সকাল ৫টার দিকে আমার ঘুম ভাঙার পর আমি তাকে লেখার টেবিলে না দেখতে পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি এবং সারা ঘরে খুঁজতে থাকি। ইতোমধ্যে সকাল ৫টা ২৯ মিনিটে আমার স্বামী তার ফোন থেকে আমাকে কল দেন। তিনি ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেন, ‘ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, মেরে ফেলবে’। এরপর ফোনটি কেটে যায়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই সারা দিনে ফরহাদ মজহারের ফোন থেকে আরও চারবার কল পাই। সেসব ফোনালাপে ফরহাদ মজহার জানান, অপহরণকারীরা ৩৫ লাখ টাকা চেয়েছেন। ওই টাকা পেলে তাকে ছেড়ে দেবেন’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭
এমআই/ এএসআর