বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া নামি-দামি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের (সাব-স্ট্যান্ডার্ড) ৫২ পণ্য বাজার থেকে অবিলম্বে না সরানোয় গত ২৩ মে তাকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।
রোববার (১৬ জুন) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে মোহাম্মদ মাহফুজুল হক হাজির হয়ে এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন কামরুজ্জামান কচি।
ফরিদুল ইসলাম বলেন, ২৩ মে’র আদেশ অনুসারে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক রোববার আদালতে হাজির হন। উপস্থিত হয়ে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমরা গতবার (২৩ মে) যে হলফনামা দিয়েছি সেখানে ভুলবশত সঠিকভাবে আমাদের কার্যক্রমের রিফ্লেকশনটা (চিত্রায়িত) হয়নি। আজকে তার একটা সাপ্লিমেন্টারি (অনুপূরক নথি) দিয়ে বলেছি, সারাদেশে আদালতের নির্দেশমতো যে ড্রাইভ দিয়েছি তার একটা রিপোর্ট সাবমিট করেছি। আদালত আমাদের রিপোর্টে এবং আবেদনে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে (মাহফুজুল হক) অব্যাহতি দিয়েছেন। ওনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার যে রুল হয়েছিলো সেটা থেকেও অব্যাহতি দিয়েছেন।
কোন শর্তে অব্যাহতি দিয়েছেন এমন প্রশ্নে ফরিদুল আলম বলেন, কোর্টের কমন অর্ডার থাকে ভবিষ্যতে আপনি এগুলো করবেন না এবং কোর্টের আদেশ পালন করবেন। আমরাও বলেছি ভবিষ্যতে এ রকম কোনো ভুল হবে না। কোর্টের নির্দেশ সব সময় পালন করবো।
ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, চেয়ারম্যানকে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। উনি ভবিষ্যতে আদালতের কোনো স্পেসিফিক অর্ডার ভায়োলেশন করবেন না, এখন থেকে নিয়মিত ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করবেন। ওনার লোকবল সংকট থাকলে অন্যান্য এজেন্সির সহায়তা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করবেন। এ কন্ডিশন দিয়ে ফর দ্য টাইম বিং ওনাকে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
এর আগে, ২৩ মে মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলও জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
সম্প্রতি ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন ১৬ তারিখের মধ্যে দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। সে অনুসারে বিএসটিআই ৯৩ পণ্যের মান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। এরমধ্যে ২২টি পণ্য নিম্নমানের বলে জানায় তারা।
এর আগে, গত ১২ মে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বাজার থেকে আইনানুসারে এসব পণ্য সরিয়ে নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ওই আদেশ বাস্তবায়ন করে ২৩ মে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
তবে সারাদেশে ৫২ পণ্য জব্দের প্রতিবেদন দেওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে সাধুবাদ জানান আদালত।
প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের পক্ষে ছিলেন- এম কে রহমান; এসিআই-এর পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং সান চিপসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। আর বাঘাবাড়ী ঘিয়ের পক্ষে ছিলেন মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী।
গত ১২ মে শিহাব উদ্দিন খান বলেছিলেন, আদালত সেই ৫২ সাব-স্ট্যান্ডার্ড পণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে আইনানুসারে ব্যবস্থা (জব্দ বা ধ্বংস) নিতে বলছেন। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়। দুইজন বিবাদীকে এ বিষয়ে ২৩ মে আদালত আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। এছাড়া আদালত রুল জারি করেছেন।
গত ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’র (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান এ রিট করেন।
বিএসটিআই পরীক্ষায় ওইসব কোম্পানির ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য ধরা পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৯ আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা
ইএস/এনটি/এইচএ/