ঢাকা: লেজিসলেটিভ ক্যাডার সার্ভিস গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সেটি বিবেচনাধীন রয়েছে।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের গুরুত্ব উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে লেজিসলেটিভ ক্যাডার সার্ভিস গঠনের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, লেজিসলেটিভ ডিভিশনে যারা কাজ করেন তাদের একটা ক্যাডার সার্ভিস তৈরি করার প্রয়োজন আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাসে আমি প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অলরেডি প্লেস করেছি। এটা কনসিডারেশনে আছে। আপনারা যাতে ডিপ্রাইভ না হন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং উইং প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠন করলে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর উক্ত উইংকে তিনি লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে উন্নীত করেন। আইনি পরিকাঠামো বিনির্মাণে এ বিভাগ সরকারকে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য সুসংহত আইনি কাঠামোসহ আইনের শাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য। সে কারণেই সরকার বিষয়ভিত্তিক নতুন নতুন আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য, পুষ্টি, মাতৃত্ব, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া, পরিবেশ, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হচ্ছে। সরকারের এ সকল কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন, অধ্যাদেশ ও আইনি মর্যাদা সম্পন্ন দলিল, চুক্তি ইত্যাদি প্রণয়নে এ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মন্ত্রী জানান, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সহায়তায় ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি গুরুত্বপূর্ণ ৫১০টি আইনের খসড়া প্রণয়ন ও ভেটিং, ৪৪টি অধ্যাদেশ প্রণয়ন, ৪ হাজার ৪১৫টি বিধিমালা, প্রবিধানমালা, আদেশ, নীতিমালা ইত্যাদির খসড়া প্রণয়ন ও ভেটিং, প্রায় ৪৫০টি চুক্তি ভেটিং এবং আইনি ব্যবস্থায় জনগণের অভিগম্যতা এবং সকলের কাছে আইনের সহজবোধ্যতা ও সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ ও আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৬৮টি আইন, বিধিমালা ও চুক্তির নির্ভরযোগ্য অনূদিত পাঠ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ল’স অব বাংলাদেশ (http://bdlaws.minlaw.gov.bd) ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশের প্রচলিত ১৭৯৯ থেকে অদ্যাবধি সকল আইনের একটা বিশাল অনলাইন ভাণ্ডার। যার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী তার চাহিদামত সর্বশেষ প্রকাশিত আইন ও অধ্যাদেশ এবং এর সফটকপি ডাউনলোডসহ প্রয়োজনে প্রিন্ট করতে পারেন। বর্তমানে এটাই বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের একমাত্র ওয়েবপোর্টাল, যা প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার বার অনুসন্ধান হয়ে থাকে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানবাধিকারের সংগ্রামের ফসল হিসেবে। আর এই ফসল ফলিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমান সরকারই ১৯৯৬ সালে তাদের যুগান্তকারী রাজনৈতিক উত্থানের পর দেশে একটি মানবাধিকারের পরিবেশ সৃষ্টি এবং পূর্বসূরিদের অনুসৃত বিচারহীনতার সংস্কৃতি তিরোহিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা প্রথম অনুভব করতে পেরেছিল।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও কার্যক্রম নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
এমআইএইচ/এমজেএফ
