রংপুর: রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় এক বাক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ ও এর ফলে সন্তান জন্মদানের মামলায় আসামি আবুল কালামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া ছেলেকে ধর্ষকের ওয়ারিশ ঘোষণা করে ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আবুল কালাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, পীরগাছা উপজেলার বাক প্রতিবন্ধী (তৎকালীন ১৮ বছর বয়স) এক তরুণীকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন চাচাতো বোনের স্বামী আব্দুল জলিলের ছেলে আবুল কালাম (তৎকালীন ৩৫ বছর বয়স)। এতে বাধা দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর বিকেলে কৌশলে ওই তরুণীকে বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এর কিছুদিন পর মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। টের পেয়ে স্বজনরা জিজ্ঞেস করলে ইশারায় তিনি আবুল কালাম তাকে ধর্ষণ করেছেন বলে জানান। ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ওই তরুণী একটি ছেলের জন্ম দেন। পরে ধর্ষণের ঘটনা এবং সন্তানের পিতৃপরিচয় দিতে রাজি না হলে ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আবুল কালামকে আসামি করে আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন মেয়েটির বাবা। আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেন পীরগাছা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সামাদ সরকার। মামলার একপর্যায়ে ধর্ষণের কারণে জন্ম নেওয়া শিশুর এবং ধর্ষকের ডিএনএ পরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে নয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে দীর্ঘ ১১ বছরেরও বেশি সময় পর রোববার এ রায় দিলেন আদালত।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছাড়াও আবুল কালামকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং শিশুটিকে ধর্ষকের ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তির অংশীদারিত্বের রায় দিয়েছেন বিচারক। যদি ধর্ষকের কোনো সম্পত্তি না থাকে, তাহলে ওই শিশুর ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অনেক দেরিতে হলেও আসামির যাবজ্জীবন সাজা ও সন্তানের স্বীকৃতির এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ভিকটিমের পরিবার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
এসআই