ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দুদকের ভুল, নিরাপরাধ যুবকের ১৫ বছরের দণ্ড!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২১
দুদকের ভুল, নিরাপরাধ যুবকের ১৫ বছরের দণ্ড!

ঢাকা: ১৯৯৮ সালের এসএসসির সনদ জালিয়াতি করে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছেন এক যুবক। এমন অভিযোগ এনে ২০০৩ সালের মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো।

দশ বছর পরে অভিযোগ পত্র দাখিল এবং ২০১৪ সালে মামলার বিচার শেষে আসামিকে পলাতক দেখিয়ে তিনটি ধারায় পাঁচ বছর করে ১৫ বছরের সাজা দেন আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

এই দণ্ডের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা দেখে নিরাপরাদ যুবক হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে বলেন, তার জন্ম ১৯৯০ সালে। এমনিক সে সংশ্লিষ্ট কলেজে কোনো দিন ভর্তি হননি। এরপর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের জবাবে দুদক বলছে-সরল বিশ্বাসের ভুল (বোনাফাইড মিসটেক)। সোমবার রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) দিন রেখেছেন।

 এমন ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে। তবে রিটকারী যুবককে একদিনও জেল খাটতে হয়নি।

আদালতে রিট আবেদনকারী যুবকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

রিটের নথি ঘেটে জানা যায়, ২০০৩ সালের সালের জানুয়ারিতে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রসিকিউটিং পরিদর্শক মো. শহীদুল আলম একটি এজাহার দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, নোয়াখালী সদর থানার পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে কামরুল ইসলাম নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭৬ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাশের জাল/ভুয়া মার্কসীট ও প্রশংসাপত্র সৃজন/সংগ্রহ করে ১৯৮৯-৯৯ সেশনে মাইজদী পাবলিক কলেজে ভর্তি হন।

মামলাটির তদন্ত করেন দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালীর সমন্বিত জেলা কার‌্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহফুজ ইকবাল। পরে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর চার্জশীট জমা দেন। মামলার বিচার শেষে নোয়াখালীর বিশেষ জজ শিরীন কবিতা আখতার ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেন। রায়ে কামরুল ইসলামকে পেনাল কোডের ৪৬৭ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ৪৭১ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রায়ে বলা হয়, সকল কারাদণ্ড একত্রে চলিবে,কিন্তু অর্থ দণ্ড পৃথক পৃথকভাবে দিতে হবে। অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

এ রায়ের পরে পুলিশি তৎপরতা দেখে নোয়াখালী সদরের পূর্ব রাজারামপুরের মো.আবুল খায়েরের ছেলে রিটকারী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে রিট করেন। রিটে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে হরিনারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। দরিদ্রতার কারণে এইচএসসিতে ভর্তি পারেননি। ২০০৮ সালের ৮ জুলাই এমএলএসএস হিসেবে লক্ষীপুর আদালতে যোগ দেন। পরে নোয়াখালীতে বদলি হন। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে তিনি নোয়াখালী আদালতের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

রিটে আরও বলা হয়, মামলায় ১৯৯৮ সালের ঘটনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আবেদনকারীর দাবি তখন তার বয়স আট বছর। আর যে কামরুলের কথা মামলায় বলা হয়েছে, সে কামরুলের বাড়িও একই উপজেলায়। কাকতলীয়ভাবে তার বাবার নাম এবং আবেদনকারীর বাবার নামও একই। তবে গ্রামের নামের প্রথম অংশ ভিন্ন ভিন্ন। আবেদনকারীর গ্রামের নাম হচ্ছে পূর্ব রাজারামপুর। আর দণ্ডিত কামরুলের গ্রামের নাম হচ্ছে পশ্চিম রাজারামপুর। সুতরাং রিট আবেদনকারী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম আসামি নন, দণ্ডিতও নন।     

এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট গতবছর ৫ নভেম্বর রুল জারি করেন এবং দুদকের কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চান। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রুলের জবাব দিয়ে দুদক ভুল স্বীকার করেন।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) দুদকের আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান বলেন, গ্রামের নামে ভুলের যে বিষয়টা এসেছে এটা আমাদের বোনাফাইড মিসটেক। আমরা তার রিটের সাথে একমত। এখানে একটা বিষয় যে, কামরুল কিন্তু একদিনও জেল খাটেনি। আমরা চাইনা কোনো নিরাপরাদ ব্যক্তি জেল খাটুক।  আদালত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায়ের জন্য দিন রেখেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬,২০২১
ইএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।