ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

শাহিন হত্যা: ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২২ জনের যাবজ্জীবন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২১
শাহিন হত্যা: ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২২ জনের যাবজ্জীবন রাজশাহী ছাত্রলীগ নেতা শাহিন শাহ

রাজশাহী: রাজশাহীতে ছাত্রলীগ নেতা শাহিন শাহ হত্যা মামলায় বিএনপিপন্থী এক সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ নয়জনের মৃত্যুদণ্ড ও ২২ জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (০৯ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ও এইচ এম ইলিয়াস হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী শাহিন শাহ হত্যা মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নয় আসামির প্রত্যেককে এক লাখ টাকা এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামির প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা আদায় করে ভিকটিমের পরিবারকে বুঝিয়ে দিতে রায়ে বিশেষভাবে আদেশ দিয়েছেন বিচারক। এক বছরে দফায় দফায় ১২ বারের মতো পেছানোর পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।

নিহত শাহিন শাহ রাজশাহী কোর্ট কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মহানগরীর গুড়িপাড়া এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে। এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্যানেল মেয়র-২ ও এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রজব আলীর ছোট ভাই।

শাহিন শাহ হত্যা মামলায় মোট ৩১ জন আসামি ছিলেন। সবারই সাজা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলার এক নম্বর আসামি ছিলেন সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপিপন্থী সাবেক কাউন্সিলর মুনসুর রহমান। তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- মহানগরীর পূর্ব রায়পাড়া এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে হাসানুজ্জামান হিমেল (৩৮), তৌফিকুল ইসলাম চাঁদ (৪৫), গিয়াস উদ্দিন ওরফে গিসুর ছেলে মো. মহসীন (৫০), ওয়াজেদ আলীর ছেলে মো. সাইরুল (২৬), নুহু শেখের ছেলে রজব (৩২), আক্কাস আলীর ছেলে বিপ্লব (৩৫), গুড়িপাড়া এলাকার গোলশের কসাইয়ের ছেলে মো. মমিন (৩০) এবং আব্দুস সামাদের ছেলে আরিফুল ইসলাম (২৬)।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মহানগরীর বুলনপুর জিয়ানগর এলাকার ওয়াজেদ আলীর ছেলে লাল মোহাম্মদ ওরফে লালু (৩৮), গিয়াস উদ্দিন ওরফে গিসুর ছেলে মাহাবুল হোসেন (৪২), তাজু শেখের ছেলে সাত্তার (৪৫), আজিম আলীর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (৩৮), ঝাড়ু শেখের ছেলে বখতিয়ার আলম রানা (৩৫), হাসান আলী (৩২), লিয়াকত মণ্ডলের ছেলে মাসুদ (৩৫), তাইদের ছেলে রাসেল (৩২), ইমদাদুল হকের ছেলে রাজা (৩২), মজিবর রহমানের ছেলে মর্তুজা (৩০), মো. মোস্তফার ছেলে সুমন (৩০), গুড়িপাড়া এলাকার মো. মহসীনের ছেলে আসাদুল (২২), আখতারুল (২৫), আব্দুস সামাদের ছেলে জইদুর রহমান (৪৮), গোলাপ শেখের ছেলে ফরমান আলী (৪০), খলিলুর রহমানের ছেলে জয়নাল আবেদিন (২৫), রেজাউল করিমের ছেলে রাজু আহমেদ (২৮),  মাজদার আলীর ছেলে আকবর আলী (৪৫), ওয়াহেদ আলীর ছেলে সম্রাট হোসেন (১৯), ওয়াজেদ আলীর ছেলে টিয়া আলম (৩০), আজম আলীর ছেলে আজাদ হোসেন (৩৫) ও ওয়াহেদ কসাইয়ের ছেলে মো. মাসুম (২৬)।

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী (পিপি) অ্যাডভোকেট মোসাব্বিরুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় মোট ২৪ জন সাক্ষী ছিলেন। এরমধ্যে আদালতে মোট ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণের পর ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর আদালতে উভয় পক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু দফায় দফায় রায় ঘোষণার দিন পেছানো হয়। এক বছর পর আজ রায় ঘোষণা করা হলো।  

চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের পিপি মোসাব্বিরুল ইসলাম বলেন, এই রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী হামিদুল হক জানিয়েছেন, এ রায়ে তারা সংক্ষুব্ধ। ন্যায় বিচারের জন্য তারা দ্রুত উচ্চ আদালতে যাবেন।

আর এই রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেন নিহতের ভাই ও মামলার বাদী নাহিদ আক্তার নাহান। রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি অবিলম্বে এই রায় কার্যকরের দাবি জানান।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট দুপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন শাহিন শাহ। এ ঘটনায় তার ভাই যুবলীগ নেতা নাহিদ আক্তার নাহান বাদী হয়ে পরদিন মহানগরীর রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান সিটি করপোরেশনের তৎকালীন এক নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপিপন্থি কাউন্সিলর মুনসুর রহমানসহ ৩১ জনকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন নিহত শাহিন শাহর বড় ভাই রজব আলী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা মুনসুর রহমান। নির্বাচনে মুনসুর রহমান নির্বাচিত হন। নির্বাচন চলাকালে মুনসুর রহমান আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন।

এ নিয়ে রজব আলী ও তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা শাহিন শাহ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেন। এর জের ধরে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট মুনসুর ও তার সমর্থকরা রজব আলীর মালিকানাধীন রজব অ্যান্ড ব্রাদার্সের গুদাম ঘর ও ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এছাড়া শহীদ কামারুজ্জামান স্মৃতি সংঘ ভাঙচুর করে তাদের বাড়িতেও আক্রমণ করা হয়। রজবসহ তার ভাইদের খুঁজে না পেয়ে হামলাকারীরা ঘোষণা দেন তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করা হবে।

পরদিন ২৮ আগস্ট গুড়িপাড়া সাকিনের ক্লাব মোড়ে শাহিন শাহকে পেয়ে আসামিরা তাকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তার কাছে থাকা মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করা হয়। এরপর পিস্তলের ফাঁকা গুলি করতে করতে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পরে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা শাহিন শাহকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২৯ আগস্ট বাদীর দায়ের করা মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তের পর ৩১ জনকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়। এরপর মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মামলাটি বিচারের জন্য রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
এসএস/এমআরএ/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।