ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

কক্সবাজার ভ্রমণ

এ. আর তুহিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৯ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৩
কক্সবাজার ভ্রমণ

অনেকদিন ধরেই কক্সবাজার যাব বলে আশাটা মনে পুষে রেখেছিলাম কিন্তু ব্যাটে বলে মেলেনি। এবার ২ মাস আগে আমরা ৪ বন্ধু ছক কষলাম কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য।

এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য বেছে নিলাম পহেলা বৈশাখ ১৪২০।

আমরা ১১ এপ্রিল রাত ১২টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রংপুর কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডে বাসে উঠলাম। তীব্র যানজটে থাকায় ঢাকায় পৌঁছেছি পরদিন রাত ৮টায়। ঢাকায় পৌঁছে বিশ্রাম নিয়ে ওই দিন রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বাসে উঠলাম। এবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছালাম ১৩ ঘণ্টার দীর্ঘ জার্নি করে দুপুর ১টায়। দীর্ঘ যাতায়াতের ফলে আমরা সবাই কিছুটা অসু¯’ হয়ে পরলাম। পরে সেখানে বন্ধুর বোনের বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে পহেলা বৈশাখের আগের রাত ঘুমিয়ে আর মজার সব খাবার খেয়ে ঘোরার জন্য প্রস্তুত।

ভ্রমণের শুরুতেই আমাদের আশায় গুরে বালি। অনেক আশা ছিল বাংলা বর্ষের প্রথম দিনটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্য ওঠা দেখে স্মরণীয় করে রাখতে। কিন্তু তীব্র যানজটে পরে তা আর হয়নি। যাই হোক সূর্য ওঠা না দেখতে পারি সূর্যাস্ত দেখতে পাবো বলে রওনা দিলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। আঁকা বাঁকা পথ পেরিয়ে রাস্তার দু’পাশে সাড়ি সাড়ি পাহাড় পেছনে ফেলে আমরা ছুটে চললাম কক্সবাজারে। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে অবশেষে দুপুর ২টায় পৌঁছালাম সেই কাঙ্ক্ষিত কক্সবাজারে। সেখানে বাস থেকে নেমেই আঁচ করতে পারলাম চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে এবার পহেলা বৈশাখে পর্যটক নেই বললেই চলে। বাস থেকে নেমেই একটি অটো রিক্সায় চেপে বসলাম আর বললাম সমুদ্রের কাছাকাছি একটি ভালমানের আবাসিক হোটেলে নিয়ে যেতে। অটো চালক ভাই আমাদের একদম সমুদ্রের পাশেই কয়েকটি হোটেলে নিয়ে গেলেন আমরা দেখলাম কোন হোটেল লবি থেকে সমুদ্র সৈকত স্পষ্ট দেখা যায়। হোটেল ম্যানেজারের কথা শুনে বুঝতে পারলাম পর্যটক কম আসায় এবার তাদের ব্যবসা মন্দা এজন্য আমাদের কাছে বিল অনেক কম নিল। পরে ফ্রেস হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে বিশ্রাম নিয়ে যার জন্য এত কষ্ট, আশা সেই সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে গেলাম সন্ধ্যার দিকে। চোখ জুড়ানো সৈকত দেখে আর স্লান করে সব কষ্ট আর ক্লান্তি দূর হয়ে গেল।

পরদিন সকালে উঠে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে রওনা দিলাম সাগর, পাহাড় বেষ্টিত হিমছড়ীর উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে দেখলাম মেরিন ড্রাইভের একপাশে সাগর কন্যা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আর এক পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। কলাতলী থেকে মাত্র ৭ কিঃ মিঃ দূরেই হিমছড়ী ন্যাশনাল পার্কে। সেখানে পাহাড় কেটে বানানো পেঁচানো সিড়ি বেয়ে ৩০০ ফুট ওপরে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে উপভোগ করলাম নয়ন জুড়ানো দৃশ্য। এখানেই শেষ নয় হিমছড়ী থেকে সোজা রওনা দিলাম পাহাড় আর সাগর বেষ্টিত দ্বীপ মহেশখালী। সেখানে যাওয়ার একমাত্র বাহন ট্রলার ও স্পিডবোর্ট। ১ ঘণ্টা ট্রলার ভ্রমণ শেষে পেলাম মহেশখালীর দেখা।

Rangpurএখানে রাখাইন সম্প্রদায়ের বেশকিছু মন্দির রয়েছে। আমরা মহেশখালীর নামকরা আদিনাথ মন্দির দর্শনের জন্য গেলাম। সেই মন্দিরে আকাঁবাকা সিড়ি বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে উপভোগ করলাম সাগর ও পাহাড় বেষ্টিত দ্বীপ ছোট্ট শহর মহেশখালীর অপরূপ দৃশ্য। নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগের পর ফিরে এলাম হোটেলে। বিশ্রাম নিয়ে রাতে বের হলাম কেনাকাটা করতে। আগেই অনেক সুনাম শুনেছি বার্মিজ মার্কেটের। তাই আর দেরি না করে ঢু মারলাম বার্মিজ মার্কেটে আর প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা সেরে নিলাম। হোটেল রুমে ফিরে গিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কক্সবাজার ভ্রমণ এপর্যন্তই আগামীকাল সকালে আমরা রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেব। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে ওঠে বিধিবাম প্রচণ্ড বৈশাখী ঝড় আর বজ্রপাতে কক্সবাজারের আকাশ বাতাস উথাল পাতাল। আমরা হোটেল লবিতে বসে সেই ঝড় দেখছি। জীবনে এই প্রথম এরকম প্রচণ্ড বেগে ঝড় দেখলাম। পরে দুপুরের দিকে ঝড় কিছুটা কমলে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিন্তু ঝড়ে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙ্গে পড়ায় গাড়ি অনেক ধীরগতিতে ছুটে চলল। এভাবেই দারুণ কিছু স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।

শুধুমাত্র সমুদ্র সৈকত নয় পুরো কক্সবাজারেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। অনেকেই শুধুমাত্র কলাতলী সৈকত দর্শন করে থাকেন, কিন্তু ভ্রমণের আগে কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে একটু ধারণা নিয়ে গেলে অনেক কম সময়ে ও কম খরচে ঘুরে আসতে পারেন।

কীভাবে যাবেনঃ

কক্সবাজারঃ ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে কক্সবাজারে যাওয়া যায়। এছাড়া কিছু সরকারি ও বেশ কিছু বেসরকারি বিমান নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনেই যেতে পারেন সেখান থেকে ৩০ মিনিট পর পর কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাস ছেড়ে যায়।  

মহেশখালীঃ মহেশখালীতে শুধুমাত্র ট্রলারে এবং স্পিডবোর্টে যাওয়া যায়। কক্সবাজারের ৬নং ঘাট থেকে মহেশখালী ট্রলারে যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা আর স্পিডবোর্টে ২০ মিনিট।

হিমছড়ীঃ কলাতলী থেকে অটোরিক্সায় করে সেনাবাহিনী নির্মিতব্য মেরিন ড্রাইভ দিয়ে মাত্র ৪০ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারেন হিমছড়ী জাতীয় উদ্যানে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।