ফরিদপুর: বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশের মঞ্চ ভেঙে তছনছ করাসহ তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে এই তাণ্ডব ঘটায় হেলমেট পরিহিত ২০/২৫ জন যুবক।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১১ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এসময় পুলিশের ৫ জন ও বিএনপির কমপক্ষে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, এটি স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের কোন্দলের জের।
বিভাগীয় শহরগুলোতে বুধবার বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশ ছিল এটি। দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের হামলায় ও পুলিশের গুলিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের হতাহত হওয়া ও গায়েবি মামলার প্রতিবাদে তারা এই সমাবেশ ডেকেছিলো ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে ৪টার মধ্যে সেখানে জড়ো হয় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী। সেখানে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল ছুঁড়ে ও ঘটনাস্থলে পরপর তিনটি ককটেল ফাটিয়ে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে হেলমেট বাহিনী। মোটরসাইকেল যোগে হেলমেট পরিহিত ২০/২৫ জন যুবক জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে সবার সামনেই হামলা চালায় বিএনপির এই সভায়।
এতে বিএনপির কমপক্ষে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়ে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গ্রেফতার এড়াতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন না তারা।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রেসক্লাব চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ভাংচুর হওয়া মঞ্চ, চেয়ারের ভাঙ্গা টুকরা ও ইটপাটকেল ছড়িয়ে থাকা প্রেসক্লাব চত্বর পুলিশ পরিবেষ্টিত। সেখানে পোশাকে ও সাদা পোশাকে অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।
পুলিশ জানায়, বিএনপির দুই গ্রুপ মারামারি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় তারা এক পর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়। এসময় তাদের ইটের আঘাতে ৫ পুলিশ আহত হয়েছেন বলে দাবি করে পুলিশ।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, বিএনপির সমাবেশ মঞ্চে হামলার ঘটনায় তাদের দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই দায়ী। তারা শামা ওবায়েদ ও নায়েবা ইউসুফ এই দুই দলে বিভক্ত। এই হামলা সেই বিভক্তির কারণেই ঘটেছে।
বিকেল ৫টার দিকে দেখা যায়, ফরিদপুর প্রেসক্লাব সংলগ্ন মুজিব সড়কের পাশ থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ ভ্যানে তুলে নেয় ডিবি পুলিশের সদস্যরা। এসময় তাকে ছাড়াতে স্থানীয় বিএনপির সিনিয়র নেতারা এগিয়ে গেলে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ঘটে পুলিশের।
বিএনপির দাবি, এ নিয়ে তাদের ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে মারামারি করে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই গ্রেফতার ও হামলা এবং মঞ্চ ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
হামলায় পণ্ড হয়ে যাওয়া উক্ত সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবার কথা ছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলামের।
ভাঙচুর হওয়ার পর তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং সাংবাদিকদের সঙ্ড়ে কথা বলেন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করার কথা ছিল ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এএফএফ কাউয়ূম জঙ্গীর।
মঈন খান বলেন, এখানে আজ আমাদের যে সমাবেশ ছিল সেটা ছিল সাধারণ মানুষের উপরে এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের উপরে সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এর বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ ছোট সমাবেশ করতে এসে আমরা হামলার শিকার হলাম।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া স্বপন বলেন, হামলায় দিলিপসহ তাদের অন্তত ৮জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ রিতু, কামাল, রাজীব ও সিজানসহ বেশ কয়েকজন তরুণকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
এসএএইচ