কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে সাহেরা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি স্বামী মোখলেছুর রহমানকে (৪৫) প্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) দুপুরে আসামিকে কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমানের আদালতে নেয়া হলে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) ভোররাতে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার টিকুর শালখুরিয়া গ্রাম থেকে প্রযুক্তির সহায়তায় মোখলেছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ।
এদিকে মোখলেছুর রহমানের গ্রেপ্তারের খবর শুনে ঘটনাস্থল কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ী এলাকার শতাধিক মানুষ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুড়িগ্রাম সদর থানা চত্বরে অবস্থান নিয়ে আসামির ফাঁসির দাবি জানান। দুপুরে আদালতে নেওয়ার সময় আসামিকে লক্ষ্য করে তারা জুতা নিক্ষেপ করেন।
নিহত গৃহবধূর ছেলে শামীম ইসলাম জানান, বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গেট তালাবদ্ধ দেখতে পান। চিৎকার করলেও মা সাহেরা বেগম সাড়া না দেওয়ায় প্রতিবেশীসহ দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেন তিনি। এসময় শয়ন কক্ষের মেঝেতে এবং বিছানার লেপে রক্ত দেখতে পেয়ে তা খুলে মায়ের গলাকাটা রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখতে পান। পরে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে রাতেই মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার বাদী নিহত গৃহবধূর মা ফাতেমা বেগম দাবি করে বলেন, আমার জামাই আমার মেয়েকে হত্যা করে পালিয়েছে। আমি খবর শুনে এসে মেয়ের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পাই। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার বাংলানিউজকে জানান, নিহত গৃহবধূর মা-সহ পরিবারের দাবি, পারিবারিক কলহের জেরে সাহেরার স্বামী তাকে গলাকেটে হত্যা করে ঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। ঘটনা জানার পর রাতেই পুলিশ লাশ উদ্ধার করে আসামি ধরতে সাড়াশি অভিযানে নামে। প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার টিকুর শালখুরিয়া গ্রাম থেকে অভিযুক্ত একমাত্র আসামি মোখলেছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমানের আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। খুনের সময় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওসি আরও জানান, নিহতের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে জামাই মোখলেছুর রহমানকে আসামি করে কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আসামি দীর্ঘদিন থেকে বেকার। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। এর মধ্যে সে লুডু দিয়ে জুয়া খেলতো। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটতো। একাধিকবার স্ত্রী সাহেরাকে হত্যার হুমকিও দেয় সে। হত্যার পরিকল্পনা মোতাবেক কিছুদিন আগে একটি মাংস কাটার দা ধার দিয়ে রাখে সে। এই দা দিয়েই বুধবার সাহেরাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন বাংলানিউজকে জানান, নিহত সাহেরা বেগম উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের পলাশবাড়ী পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী মো. মোখলেছুর রহমান পলাতক ছিলো। ঘটনা জানার পরপরই পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসামি গ্রেপ্তারের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে আমি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের কারণে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আসামিকে পুলিশ অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তদন্ত চলছে। এর বাইরেও যদি কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২২
এনএস