ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুই মেয়ের সঙ্গে এসএসসি, পরীক্ষায় ফলাফলে এগিয়ে বাবা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২২
দুই মেয়ের সঙ্গে এসএসসি, পরীক্ষায় ফলাফলে এগিয়ে বাবা

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে দুই মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন বাবা জয়নাল আবেদীন (৪৪)। পরে ফলাফলে দুই মেয়ের একজন কৃতকার্য এবং অপরজন অকৃতকার্য হলেও বাবা জয়নাল ফলাফল নম্বরে এগিয়ে।

ঘোষিত কারিগরি বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষার ভোকেশনাল শাখা থেকে বাবা জয়নাল পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং বিষয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৬ পেয়েছেন। এতে বড় মেয়ে জেসমিন আক্তার ঢাকা বোর্ডের অধীন মানবিক শাখা থেকে জিপিএ ৩ দশমিক ৩৩ পেয়ে কৃতকার্য হয়েছে। এছাড়া তার আরেক মেয়ে আছিয়া খাতুন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে।

বাবা জয়নাল আবেদীন উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের ফুলমালিরচালা গ্রামের বাসিন্দা এবং ফুলমালীর চালা ফজরগঞ্জ আলিম মাদরাসা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার দুই মেয়ে উপজেলার ফুলমালির চালা ছাকেদ আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ছিল। এছাড়াও জয়নাল আবেদীনের এক ছেলে রুহুল আমিন দ্বিতীয় শ্রেণি, মেয়ে বর্ষা ষষ্ঠ শ্রেণি ও সুমাইয়া অষ্টম শ্রেণিতে স্থানীয় রাশেদ মডেল স্কুলে পড়াশোনা করছে।

বড় মেয়ে জেসমিন আক্তার জানায়, বাবার সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি এটা খুবই আনন্দের। তবে আমার চেয়ে বাবা ফলাফলে এগিয়ে। তবে ছোট বোন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় আনন্দ কিছুটা কম। তারপরও ভালো লাগছে বাবা পরীক্ষায় পাস করেছে বেশি নম্বর পেয়ে। বাবার অদম্য ইচ্ছা-শক্তির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। আমরা বাবার সফলতায় আনন্দিত।

জয়নাল আবেদীন বলেন, ১৯৯৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। সংসারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর সৌদি আরবে ৫ বছর প্রবাসী জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসি। ২০০১ সালে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করি। কিন্তু বুকের ভেতরে লেখাপড়া করতে না পারার চাপা কষ্ট মাঝেমধ্যেই আমাকে পীড়া দিতো। লোকলজ্জার কারণে পড়ালেখা হয়ে উঠছিলো না। পরে ২০২০ সালে ফুলমালীর চালা ফজরগঞ্জ আলিম মাদরাসায় ভোকেশনাল শাখার পোল্টি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং ট্রেড শাখায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই। পরে এসএসসি পরীক্ষায় মেয়েদের সঙ্গে আমিও অংশ নিই। এতে মেয়েরা আমাকে উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েছি।

ফুলমালীর চালা ফজরগঞ্জ আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর কাদের বলেন, ৪৪ বছর বয়সে এসে এসএসসি পাস করায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। লেখাপড়ায় বয়স কোনো বাধা নয়, এটা জয়নাল আবেদীন প্রমাণ করছেন। যা অন্যের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২২
এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।