ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঢামেক হাসপাতালে ৩ হাজার টাকার প্যাকেজ চিকিৎসা! 

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২২
ঢামেক হাসপাতালে ৩ হাজার টাকার প্যাকেজ চিকিৎসা!  কৃষ্ণ মল্লিক ও রুনু মল্লিক দম্পতি

ঢাকা: ১০ টাকার টিকিটে চিকিৎসার জন্য ডান হাতের আঙুলে আঘাত নিয়ে নিয়ে স্বর্ণের দোকানের কারিগর কৃষ্ণ মল্লিক (৪৮) আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। তবে সেখানে এসে তিনি তিন হাজার টাকায় প্যাকেজে চিকিৎসার প্রস্তাব পান।

জরুরি বিভাগের চার নম্বর কক্ষে দায়িত্বরত কয়েকজন তাকে বলেন তিন হাজার টাকা দিলে সবকিছু প্যাকেজে করে দেওয়া হবে। টাকা না দিলে তা বন্ধ।

কৃষ্ণ মল্লিকের সঙ্গে আসেন তার স্ত্রী রুনু মল্লিক। স্বামীর হাতে তীব্র ব্যথা সহ্য হচ্ছিল না তার। এই পরিস্থিতিতে তিনি জরুরি বিভাগের চার নম্বর কক্ষের দায়িত্বরত লোকজনদের বলেন। তিনি দায়িত্বরতদের বলেন, আমরা গরিব মানুষ আমাদের কাছে তেমন টাকা নেই। তা ছাড়া এটি সরকারি হাসপাতাল। গরিব দেখেই এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছি।

এই কথার পরও তারা (দায়িত্বরতরা) টাকা ছাড়া কোনো চিকিৎসা করতে রাজি হন না। এক পর্যায়ে রুনু মল্লিক টাকা দিতে রাজি হলে তারা কৃষ্ণ মল্লিকের  টিকিটে লেখা চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা দেন। পরে রুনু মল্লিক তাদের হাতে দুই হাজার টাকা দিয়ে বলেন, আমার কাছে এই টাকা আছে। আমি নরসিংদী সদর এলাকায় থাকি। কিন্তু এখন বাড়ি ফেরার জন্য বাস ভাড়াও আমার কাছে নেই। এক পর্যায়ে তারা সেখান থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা রেখে ৫০০ টাকা ফেরত দিয়ে দেন।

রোববার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কৃষ্ণ মল্লিক ও তার স্ত্রী রুনু মল্লিক এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। বাংলানিউজকে রুনু মল্লিক বলেন, শুনেছি এখানে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটলেই সব চিকিৎসা পাওয়া যাবে। সেই ভরসায় সরকারি হাসপাতালে আসা। নিয়ম অনুযায়ী ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটার পর এক নম্বর কক্ষের চিকিৎসক তাকে জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য চার নম্বর কক্ষে পাঠান। সেখানে দায়িত্বরত কয়েকজন আমাদের কাছে আঙুলের চিকিৎসার জন্য প্যাকেজ হিসেবে তিন হাজার টাকা দাবি করেন।

তিনি বলেন, পরে দুই হাজার টাকায় তারা রাজি হয়ে আমার স্বামীর হাতের আঙুলে ড্রেসিং করান। টাকা দেওয়ার পরে তাদের বলি, আমরা গরীব মানুষ আমাদের কাছে ফিরে যাওয়ার বাস ভাড়াটাও নেই। এক পর্যায়ে তারা আমার এই কথা শুনে পাঁচশ টাকা ফেরত দেন।  

তিন হাজার টাকার প্যাকেজের বিষয়ে জরুরি বিভাগের নার্সদের ইনচার্জ লিয়াকতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ইমার্জেন্সি ওটিতে (চার নম্বর কক্ষ) দায়িত্বরত লোকজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে সেই নারীকে টাকা ফিরিয়ে দেন।  
জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচার কক্ষে রোগীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নার্সদের ইনচার্জ লিয়াকতের সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। তিনি জানান, হাসপাতালের বাইরে আছেন। বিষয়টি জানতেন না তিনি। তবে তিনি ওটিতে কথা বলার পর টাকা ফিরে পায় ভুক্তভোগী দম্পতি।  

দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার শেষ ভরসাস্থল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র জানায়, এখানে রয়েছে তীব্র শয্যা সংকট। ধারণক্ষমতার থেকেও রোগী তিনগুণ বেশি। নেই পর্যাপ্ত জনবল।  
এতসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনা, জখম, অগ্নিদগ্ধ, জটিল ও দূরারোগ্যসহ নানা রোগে আক্রান্ত যেকোনো রোগী এই হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলে চিকিৎসা সেবা পাবেন- এমনটিই মনে করেন। আর তাই দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন বহু রোগী ছুটে আসেন এই হাসপাতালে।  

ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসে ১০ টাকায় টিকিট কেটে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অসাধুদের খপ্পরে পড়ার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। অথচ হাসপাতালের অনেক স্থানে লিখা আছে দালাল থেকে সাবধান। সূত্রটি জানায়, প্রতিদিনই হাসপাতাল থেকে দু-একটি অভিযোগ প্রশাসনিক ব্লকে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২২
এজেডএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।