ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় মেহেরপুর

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২২
৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় মেহেরপুর

মেহেরপুর: আজ ৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুর মুক্ত দিবস।

মূলত, ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর সকাল থেকেই মেহেরপুর হানাদারবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। ২ ডিসেম্বর জেলার গাংনী উপজেলা হানাদার মুক্ত হলে ভারতের শিকারপুরে অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর অ্যাকশন ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন তৌফিক এলাহী চৌধুরী চুয়াডাঙ্গা জেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামে এসে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করেন। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সম্মিলিতভাবে ৫ ডিসেম্বর মেহেরপুরে প্রবেশ করে।

১ ডিসেম্বর মেহেরপুর মুক্ত হলেও সীমান্তে পাক হানাদারবাহিনীর পুঁতে রাখা অসংখ্য মাইন অপসারণের মধ্য দিয়ে মেহেরপুর হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয় ৬ ডিসেম্বর। সেই থেকে ৬ ডিসেম্বর পালিত হয়ে আসছে মেহেরপুর মুক্ত দিবস।

মেহেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল দুপুরে প্রথম পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মেহেরপুরে প্রবেশ করে। হানাদারবাহিনী সড়কপথে চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুরে আসার পথে আমঝুপিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যা করে ৮ গ্রামবাসীকে। পরবর্তীতে তারা মেহেরপুর প্রবেশ করে একের পর এক হামলা চালায় কাঁচাবাজার পট্টিতে, মহাকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে ও বড় বাজারের সবজি পট্টিতে।

১৮ এপ্রিল পাকবাহিনী কোনো প্রতিরোধের সম্মুখীন না হওয়ায় তারা তাদের অকুণ্ঠ বিজয় ভেবে ক্যাপ্টেন মো. আব্দুল লতিবের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে লুটপাট চালায়। ২০ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সৈন্যেরা মেহেরপুরের থানা কাউন্সিলে স্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তোলে। স্থায়ী ক্যাম্প করার কিছুদিনের মধ্যেই সৈন্যের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে মেহেরপুরের ভকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, কালাচাঁদপুর, কামদেবপুর ও সীমান্ত এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পাকবাহিনীর ওপর মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা বিরামহীন আক্রমণ চালাতে থাকে।

১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে মুক্তি বাহিনীর ঘাঁটি থাকার অজুহাত এনে যাদবপুর গ্রামকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পাকিস্তানি নরপশুরা। পরের দিন ৩১ মে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব দিয়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজে একটি অভ্যর্থনা কক্ষ নামধারী বাঙালি নির্যাতন কেন্দ্র খুললেও মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে এই পক্ষ কোনো সফলতা বয়ে আনতে পারেনি।

১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর ওপরে আক্রমণ চালাতে শুরু করলে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা যুদ্ধ সরঞ্জাম গোটাতে থাকে। ওই দিনেই মুক্তিবাহিনী সকাল থেকে মেহেরপুরের পাকবাহিনীর আস্তানা লক্ষ্য করে চারদিক থেকে অবিরাম গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে আহতও হয় বেশ কয়েকজন। ২৮ এবং ২৯ নভেম্বর মুক্তি বাহিনীর একের পর এক হামলায় হানাদারবাহিনী মেহেরপুরে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পাকবাহিনী ৩০ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে গোপনে পিছু হটতে থাকে। বিতাড়িত হয়ে যাওয়ার পথে হানাদারবাহিনী আমঝুপি ব্রিজ, দিনদত্ত ব্রিজের কিছু অংশ বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে যায়। একই রাতে পালানোর সময় মুক্তিবাহিনীর মর্টার হামলায় কুলপালা নামক স্থানে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়।  

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর সকাল থেকেই মেহেরপুর হানাদারবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। ২ ডিসেম্বর গাংনী হানাদার মুক্ত হলে শিকারপুরে অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর অ্যাকশন ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন তৌফিক এলাহী চৌধুরী হাটবোয়ালিয়ায় এসে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সম্মিলিতভাবে ৫ ডিসেম্বর মেহেরপুরে প্রবেশ করে। ১ ডিসেম্বর মেহেরপুর বিমুক্ত হলেও সীমান্তে পাক বাহিনীর পুঁতে রাখা অসংখ্য মাইন অপসারণের মধ্য দিয়ে মেহেরপুর পুরোপুরিভাবে হানাদার মুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর।

দিবসটি উপলক্ষে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজন করেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।