ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে জাপানের জন্য একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনোমিক জোনের (জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল) উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, আজকের এই জাপানের উদ্যোগ অন্যদেরও আগ্রহী করবে। জাপানকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প করে দিচ্ছে। আমাদের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের নিদর্শন। তাদের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বে অনেক প্রকল্প আছে। ব্যবসাবান্ধব আরও অনেক প্রকল্প হবে আশা করি।
এক হাজার একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রস্তুত।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সম্পূর্ণরূপে চালু হলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। এটি প্রাথমিকভাবে এক লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
তিনি আরও জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে বিনিয়োগে এরইমধ্যে চুক্তি সই হয়েছে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার ও জার্মান কোম্পানি রুডলফের সঙ্গে। আরও ৪০টি কোম্পানি সেখানে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি কোম্পানি জাপানের ও বাকি ১০টি অন্য দেশের।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় দেশটির জন্য আলাদা একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ভিশন ২০১৪ সালে শুরু হয়।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ২০১৬ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। পরে ২০১৯ সালে, জাপানের সুমিতোমো করপোরেশন বিএসইজেড বিকাশের জন্য বেজার সাথে চুক্তি করে।
সিঙ্গারের মতো স্বনামধন্য সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেছে এবং জার্মান সংস্থা রুডলফের সঙ্গে একটি চুক্তিও সই হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আরও দুই জাপানি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি সই হবে, যেখানে আরও ৩০টি জাপানি ফার্ম এবং বিভিন্ন দেশের ১০টি ফার্ম ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সিঙ্গার ৭৯ মিলিয়ন ডলার প্রাথমিক বিনিয়োগ করবে। অন্যদিকে রাসায়নিক কোম্পানি রুডলফ ৭ মিলিয়ন ডলার প্রাথমিক বিনিয়োগ করবে।
জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল-২ স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য নিবেদিত আরেকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এবং চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে দক্ষ উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাকে (জাইকা) অনুরোধ করেছে সরকার।
দেশব্যাপী পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭৭ জন বিনিয়োগকারী ৮ লাখ ১৬ হাজার ৫৪১ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২২ হাজার ১৭৩ দশমিক ১৭৭ মিলিয়ন ডলারের সামগ্রিক বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন।
এই পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হল মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (বিএসএমএসএন), জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ (ধলঘাটা) এবং শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল।
প্রায় ৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ইতোমধ্যে প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
নারায়ণগঞ্জ প্রান্তে ছিলেন আড়াইহাজারের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, জাপানের সুমিতুমো করপোরেশনের সভাপতি ও সিইও মাসা উকি হিওদো।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২২
এমআরপি/এমইউএম/আরএইচ
